ভারতীয় ঘরোয়া সংস্কৃতিতে ঠাকুরঘর বা পুজোর ঘরের গুরুত্ব অপরিসীম। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী বাড়ির সমস্ত শুভ শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় এই পবিত্র স্থানটি। এ কারণে সঠিক দিক-দিশা, ঘরের গঠন, প্রতিমা স্থাপনা এবং পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা—সবকিছুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল স্থাপনা বা অগোছালো পুজোর ঘর পরিবারে অশান্তি ও অসামঞ্জস্যের কারণ হতে পারে বলে বিশ্বাস। নিচে বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী আদর্শ ঠাকুরঘর কেমন হওয়া উচিত তার বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হল।
ঠাকুরঘরের আদর্শ স্থান
বাস্তুশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ঠাকুরঘরের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ও শুভ দিক হল উত্তর-পূর্ব বা ঈশান কোণ। এটি ভগবান শিবের স্থান বলে ধরা হয় এবং এর শক্তি অত্যন্ত শান্ত ও ইতিবাচক।
উত্তর-পূর্ব দিক সম্ভব না হলে উত্তর বা পূর্ব দিকও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যা কখনও করা উচিত নয়—
* দক্ষিণ দিকে ঠাকুরঘর রাখা
* সিঁড়ির নিচে পুজোর স্থান করা
এগুলো নেতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্বাস।
ঘরের গঠন কেমন হবে
ঠাকুরঘর সবসময় সম্ভব হলে আয়তাকার বা বর্গাকার করা উচিত।
তেরচা, গোলাকার বা অদ্ভুত আকৃতির ঘর শক্তির প্রবাহে বাধা তৈরি করতে পারে।
এছাড়া ঘরের মেঝে বাড়ির অন্যান্য কক্ষের তুলনায় একটু উঁচু রাখা শুভ বলে ধরা হয়। এতে পবিত্রতা বজায় থাকে।
ঠাকুরঘরের প্রবেশপথ
* প্রবেশদ্বার ideally উত্তর বা পূর্বমুখী হলে শুভ।
* দরজা সম্পূর্ণ খোলা যায় এমন হওয়া জরুরি
* কাঠের দরজা সবচেয়ে উপযোগী
* দুই-পাল্লার দরজা আরও শুভ
* দরজা যেন শব্দ না করে
এসব বিষয় মানলে ঘরের শক্তি শান্ত ও ইতিবাচক থাকে।
প্রতিমা বা ছবির সঠিক স্থাপনা
* দেব-দেবীর মূর্তি রাখার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বিশেষভাবে মানা উচিত—
* প্রতিমা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে রাখতে হবে
* মূর্তিগুলো কখনও একে অপরের মুখোমুখি থাকবে না
* দেবমূর্তি দরজার দিকে মুখ করে রাখা যাবে না
* মেঝেতে মূর্তি রাখা নিষেধ, সবসময় উঁচু স্ট্যান্ড বা কাঠের তাক ব্যবহার করুন
এতে দেবস্থানের সম্মান ও পবিত্রতা বজায় থাকে।
পুজোর সময় বসার দিক
প্রার্থনা বা পুজোর সময় পূর্ব বা উত্তরমুখ করে বসা সবচেয়ে শুভ।
এতে মহাজাগতিক শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি হয় এবং মন আরও শান্ত ও কেন্দ্রীভূত হয়।
বসার জন্য তুলা বা পশমের মাদুর ব্যবহার করা উত্তম।
খেয়াল রাখবেন—
আপনার বসার আসন দেবমূর্তির আসনের চেয়ে নিচে হবে।
ঠাকুরঘরের সজ্জা ও গুছিয়ে রাখা
* পুজোর ঘর অগোছালো রাখা একেবারেই উচিত নয়।
* ধূপ, প্রদীপ, শাঁখ, ধর্মগ্রন্থ—সবকিছু নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন
* ক্যাবিনেট বা তাক ব্যবহার করুন
* যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করুন
* নিয়মিত তেলের প্রদীপ জ্বালালে ইতিবাচক পরিবেশ বজায় থাকে
* সাজসজ্জায় অতিরিক্ত জাঁকজমক এড়িয়ে চলাই ভালো। সরলতাই পবিত্রতার অন্যতম পরিচয়।
ঠাকুরঘরের রঙ
ঘরের দেওয়ালে ব্যবহৃত রঙ মানসিক শান্তি ও পরিবেশের শক্তি দুই-ই প্রভাবিত করে।
সবচেয়ে শুভ রঙ হিসেবে ধরা হয়—
* সাদা
* হালকা হলুদ
* হালকা নীল
এই রঙগুলো ঠাকুরঘরে একটি নির্মল, শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা
ঠাকুরঘরের পরিচ্ছন্নতা সর্বোচ্চ গুরুত্বের।
নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা, মূর্তি মুছে দেওয়া, ফুল পরিবর্তন করা এবং খেয়াল রাখা উচিত যেন কোথাও ধুলো জমে না থাকে।
ধূপ ও কর্পূরের সুবাস ঘরকে পবিত্র ও প্রশান্ত রাখে।
শেষ কথা
বাস্তুশাস্ত্রের এই নিয়মগুলি মেনে ঠাকুরঘর সাজালে ঘরে ইতিবাচক শক্তি, শান্তি ও সুরক্ষা বজায় থাকে বলে বিশ্বাস। পুজোর ঘর শুধু ধর্মীয় স্থান নয়—এটি আপনার পরিবার ও মানসিক শান্তির কেন্দ্রবিন্দু। তাই পরিকল্পনা করে, নিয়ম মেনে এবং সারল্য বজায় রেখে ঠাকুরঘর গড়ে তোলাই আদর্শ।
আরও পড়ুন,
ঠাকুরঘরে প্রবেশের আগে মানতে হবে যে নিয়মগুলি, না মানলেই অকল্যাণ