শীতের আগমনে প্রকৃতিতে যেমন হিমেল হাওয়া লাগে, তেমনই মানুষের জীবনেও আসে উৎসবের রঙ। পিঠেপুলি, নতুন গুড়ের মিষ্টি, বিয়েবাড়ি থেকে পিকনিক—সব মিলিয়ে শীত মানেই খাওয়াদাওয়ার বিশেষ আয়োজন। কিন্তু এই আনন্দের মৌসুমেই প্রবীণদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটা বেড়ে যায়। কেন শীতে এমন সমস্যা বাড়ে? কীভাবে এই সংকট থেকে রেহাই পাওয়া যায়? চলুন বিস্তারিত জানি।
কেন শীতে বাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্য?
শীতকালে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কমে যায়। এই কারণে হজমতন্ত্রে রক্তপ্রবাহ কমতে থাকে এবং হজম প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে পড়ে। অন্ত্রের স্বাভাবিক নড়াচড়া বা পেরিস্টালসিসের গতি কমে গেলে খাবারের বর্জ্য পদার্থ অন্ত্রে বেশি সময় আটকে থাকে, ফলে মল শক্ত হয়ে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও প্রকট, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিজম স্বভাবতই ধীর হয়ে যায়। তার ওপর রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ—শীতে পানি কম পান করার অভ্যাস। ঠান্ডা লাগার ভয়ে অনেকেই জল পান কমিয়ে দেন, যার ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। যথেষ্ট জল না থাকলে মল শুষ্ক হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণগুলোর একটি।
শীতে কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে করণীয়
নিম্নলিখিত ৮টি সহজ অভ্যাস শীতকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটাই কমাতে পারে—বিশেষ করে প্রবীণদের জন্য এগুলো অত্যন্ত কার্যকর:
১) পর্যাপ্ত জল পান করুন
শরীরে পানিশূন্যতা যেন না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। ঠান্ডা হলেও দিনে কমপক্ষে ৬–৮ গ্লাস জল পান করার অভ্যাস তৈরি করুন।
২) ফাইবারযুক্ত খাবার খান
শাকসবজি, তাজা ফল, ডাল, ওটস, ব্রাউন রাইস বা শস্যদানা জাতীয় খাবার অন্ত্রকে নরম রাখে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফাইবার অপরিহার্য।
৩) হালকা ব্যায়াম জরুরি
নিয়মিত হাঁটা বা সহজ কিছু যোগব্যায়াম পেরিস্টালটিক গতি বাড়িয়ে হজম শক্তি উন্নত করে। বয়স যাই হোক, অন্তত ২০–৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
৪) খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান
অতি দ্রুত খেলে অন্ত্রে চাপ বাড়ে এবং হজমে সমস্যা হয়। ধীরে, ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে আরাম দেয়।
৫) রাতের ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
রাতে খুব ভারী খাবার হজমে সমস্যা বাড়ায়। খাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে না শুয়ে ২০–৩০ মিনিট হাঁটাচলা করলে গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোই কমে।
৬) সপ্তাহে দু’দিন ইসবগুলের ভুসি
ইসবগুল অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ভিজিয়ে খেলে এটি আরও কার্যকর হয়। তবে যাদের বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা আছে, তারা আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭) সকালে উষ্ণ জল পান করুন
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা গরম জল পান করলে অন্ত্রের সঞ্চালন দ্রুত সক্রিয় হয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের অন্যতম সহজ উপায়।
৮) বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন
বাসি বা ফের গরম করা খাবার হজমে সমস্যা বাড়ায়। যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আরও পড়ুন
Hair Care: পেয়ারা পাতার যাদুতে মাথায় গজাবে ঝাঁকে ঝাঁকে চুল, জানুন ব্যবহার করার গোপন নিয়ম
উপসংহার
শীতের মজা উপভোগ করতে গেলে সুস্থ পেট রাখা জরুরি—বিশেষ করে প্রবীণদের ক্ষেত্রে। নিয়মিত জলপান, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, হাঁটা, এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে শীতের কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটাই কমানো সম্ভব। সামান্য সচেতনতা আপনার শীতকে আরও আরামদায়ক ও সুস্থ করে তুলতে পারে।