তারাপীঠ মন্দিরে প্রবেশ ও পুজো প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশৃঙ্খলা অবশেষে নিয়ন্ত্রণে আনার পথে বড় পদক্ষেপ নিল প্রশাসন। রামপুরহাট মহকুমা শাসক রাঠোর অশ্বিনী বাবুসিংহ সম্প্রতি মন্দিরের সেবাইতদের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—এবার থেকে তারাপীঠ মন্দিরে ‘টাকার খেলা’ চলবে না। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে গর্ভগৃহে ঢোকার বা দ্রুত দর্শনের যে প্রথা বহুদিন ধরে চলে আসছিল, তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
ভিড় বাড়ার সঙ্গে বেড়েছিল অভিযোগ
বিশ্ববিখ্যাত এই তীর্থক্ষেত্রে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। সম্প্রতি মন্দিরে ভিড় এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে সাধারণ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বহু মানুষ মায়ের মুখদর্শন করতে পারছিলেন না। অন্যদিকে, অভিযোগ উঠছিল—যাঁরা সেবাইতদের বাড়তি টাকা দিচ্ছেন, তাঁরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই গর্ভগৃহে প্রবেশ করে পুজো সারতে পারছেন।
এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ নেমে আসে সাধারণ পুণ্যার্থীদের মধ্যে। প্রশাসনের নজরেও আসে বিশৃঙ্খলার নানা ছবি। ফলত, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
আগের জেলাশাসকের নিয়ম কার্যকর, এবার কড়া নজরদারি
নতুন মহকুমা শাসক বৈঠকে স্পষ্ট জানান—পূর্বতন জেলা শাসক বিধান রায়ের জারি করা নিয়মকানুন এবার কঠোরভাবে পালন করতেই হবে।
২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া সেই নির্দেশ অনুযায়ী—
দিনের প্রথম এক ঘণ্টা শুধুমাত্র সাধারণ লাইনের ভক্তরা প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশেষ লাইনে ঢুকতে হলে নির্দিষ্ট কুপন সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।
গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ, অঞ্জলি-শৃঙ্গার পুজো বন্ধ
প্রশাসনের নতুন নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন—
গর্ভগৃহে সরাসরি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।
দর্শনের পরে যে পথে বাইরে বের হতে হয়, সেই পথ দিয়ে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
মন্দির কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে—গর্ভগৃহের ভেতরে অঞ্জলি বা শৃঙ্গার পুজো আর করা যাবে না।
পুণ্যার্থীরা গর্ভগৃহের বাইরে থেকেই মায়ের চরণে অর্পণ করবেন তাঁদের নিবেদন।
স্থানীয়দের জন্য বিশেষ সুবিধা
বীরভূম জেলার বাসিন্দাদের জন্য থাকবে প্রমাণপত্র দেখিয়ে বিনামূল্যে বিশেষ প্রবেশ পাশ। এতে স্থানীয় ভক্তদের সুবিধা হবে বলেই জানানো হয়েছে।
প্রতি মাসে রিভিউ মিটিং
মহকুমা শাসকের নির্দেশ—
প্রতিমাসের ১ তারিখ মন্দির কমিটির সঙ্গে রিভিউ মিটিং করা হবে।
নিয়মগুলি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, কোথাও গাফিলতি হচ্ছে কি না—সবই খতিয়ে দেখা হবে।
পুণ্যার্থীদের স্বস্তি
এই নতুন নিয়মে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বহু দর্শনার্থী। তাঁদের কথায়, তারাপীঠের মতো পবিত্র স্থানে অর্থের ভিত্তিতে বৈষম্য হওয়া উচিত নয়। নিয়মকানুন কঠোর হলে মন্দিরে শৃঙ্খলা ফিরবে, ভক্তদের অভিজ্ঞতাও হবে শান্তিপূর্ণ।
আরও পড়ুন
শাস্ত্রমতে সঠিকভাবে হনুমানজি পুজোর নিয়ম ও উপকারিতা
প্রশাসনের এই উদ্যোগে আশা করা হচ্ছে—তারাপীঠ মন্দিরে ভিড় সামলানো সহজ হবে, আর ‘টাকার খেলা’ নামের অপপ্রথারও অবসান ঘটবে।