বলিউডের ইতিহাসে তাঁর নাম এক আলাদা মর্যাদায় স্থাপিত—ধর্মেন্দ্র, যিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে রূপোলি পর্দায় রাজত্ব করেছেন। ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করা এই কিংবদন্তি অভিনেতার জনপ্রিয়তা কখনও ফিকে হয়নি রাজেশ খান্না বা অমিতাভ বচ্চনের মতো যুগান্তকারী তারকার উত্থানের মাঝেও। প্রয়াত এই অভিনেতার পুরোনো কিছু সাক্ষাৎকার তাঁর ব্যক্তিত্ব, স্টারডমের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যক্তিগত অভিমান সম্পর্কে নতুন করে আলো ফেলছে।
ধর্মেন্দ্র এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বলিউডে পরিবর্তনশীল সময় তাঁকে কেমনভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর ভাষায়, “রাজেশ খান্না যখন এলেন, পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় নেমে গেল। পরে অমিতাভ বচ্চন এলেন, প্রতিযোগিতার জ্বর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।’’ তিনি নিজেও চাইলে এই প্রতিযোগিতায় নামতে পারতেন, কারণ তিনি টানা ৩০–৩৫ বছর হিট ছবির ধারা বজায় রেখেছিলেন। তবুও তিনি কখনও স্টারডমের ইঁদুরদৌড়ে নামতে চাননি। কারণ তাঁর কাছে জনপ্রিয়তা এমন এক ভার, যা ধরে রাখতে যন্ত্রণাও কম নয়।
স্টারডমের এই চাপ সম্পর্কে ধর্মেন্দ্র তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন—“মানুষ যা নিয়ে এত কথা বলে, সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কত পরিশ্রম লাগে কেউ জানে না! কিন্তু এর শেষ কোথায়? আপনি পৃথিবী জিতে নিলেও কি সেটা থেকে যাবে?” তাঁর কথায় বুঝতে অসুবিধা হয় না, সফলতার চূড়ায় থেকেও তিনি ছিলেন এক দার্শনিক, মানুষের ভালবাসাকেই প্রাধান্য দিতেন।
১৯৭০-এর দশকে ধর্মেন্দ্র ও রাজেশ খান্নার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার গুজব ছিল। এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটে ‘আনন্দ’ ছবির সময়। ২০১৯ সালে ‘দ্য কপিল শর্মা শো’-তে ধর্মেন্দ্র নিজেই প্রকাশ করেন সেই কষ্টের কথা। পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় তাঁকে প্রথমে ‘আনন্দ’-এর গল্প শোনান, ফলে ধর্মেন্দ্র ভেবেছিলেন তিনি-ই ছবির প্রধান চরিত্রে থাকবেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, সেই ভূমিকায় নেওয়া হয়েছে রাজেশ খান্নাকে।
এই সিদ্ধান্ত তাঁকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল। তিনি স্বীকার করেন—সেই রাত তাঁর কাছে এতটাই অসহনীয় হয়ে ওঠে যে, মদ্যপ অবস্থায় হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করতে থাকেন। প্রতিবারই হৃষিদা তাঁকে শান্ত হতে বলেন—“ধরম, ঘুমাও, সকালে কথা বলব।” কিন্তু ধর্মেন্দ্র তবু ফোন কেটে আবার প্রশ্ন করেন—“আমাকে না নিয়ে তাকে নিলে কেন?”
এই ব্যক্তিগত অভিমান থাকলেও তাদের সম্পর্কের কোনও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়নি। বরং পরবর্তীকালে ‘সত্যকম’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘গুড্ডি’র মতো কালজয়ী ছবিতে তাঁরা আবারও একসঙ্গে কাজ করেছেন। বিশেষ করে ‘সত্যকম’, যা আজও অনেকের কাছে ধর্মেন্দ্রর অভিনয়জীবনের অন্যতম সেরা কাজ হিসেবে বিবেচিত।
ধর্মেন্দ্রর এই স্বীকারোক্তি তাঁর মানুষ হিসেবে গভীর সংবেদনশীলতার পরিচয় দেয়। স্টারডমের চাপ, ব্যক্তিগত কষ্ট, প্রতিযোগিতার আগুন—সবকিছুকে পাশে রেখে তিনি নিজের পথেই হেঁটেছিলেন। আজ তাঁর মৃত্যুর পর পুরোনো স্মৃতিগুলো ফিরে এসে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়—ক্যামেরার সামনে যেমন নায়ক ছিলেন, তেমনই আবেগী ও সত্যনিষ্ঠ একজন মানুষও ছিলেন ধর্মেন্দ্র।
আরও পড়ুন
Sonam Kapoor: দ্বিতীয় সন্তান আসছে খুব শীঘ্রই, বেবি বাম্পের একাধিক ছবি পোস্ট সোনমের