শীতের সময়ে বাজার সাজিয়ে থাকে নানা রকম সবজি, আর তার মধ্যেই অন্যতম জনপ্রিয় একটি শীতকালীন খাবার হলো কড়াইশুঁটি বা মটরশুঁটি। ছোট দানাদার এই সবজিটি শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারিতে—বিভিন্নভাবে এটি খাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সেদ্ধ করে খেলে এর উপকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতে কেন অল্প করে কড়াইশুঁটি খাওয়া উচিত এবং এতে কী কী স্বাস্থ্যগুণ পাওয়া যায়।
১. প্রোটিনের চমৎকার উৎস
যাঁরা নিরামিষভোজী, তাঁদের জন্য কড়াইশুঁটি একটি উত্তম প্রোটিনের বিকল্প। মটরশুঁটির মধ্যে থাকা প্রোটিন শরীরের পেশি গঠন, টিস্যু মেরামত এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। শীতে নিয়মিত অল্প করে সেদ্ধ কড়াইশুঁটি খেলে শরীরের পুষ্টির চাহিদা সহজেই পূরণ হয়।
২. উচ্চমাত্রার ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে
কড়াইশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যতন্তু বা ফাইবার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অকারণে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। তবে কাঁচা কড়াইশুঁটি অনেক সময় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই সেদ্ধ করে স্যালাড বা খাবারের সঙ্গে মেশানোই উত্তম।
৩. ভিটামিনে ভরপুর—পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক
মটরশুঁটি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। নিয়মিত খেলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বিশেষ করে শীতকালে ভিটামিনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৪. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
কড়াইশুঁটির বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। এতে থাকা ফাইবার, মিনারেল ও ভিটামিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, কারণ অতিরিক্ত খেলে পেটের অস্বস্তি হতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
কড়াইশুঁটির ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়তে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সহায়ক। তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও এটি সেদ্ধ করে খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন—তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
৬. চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
সবুজ শাকসবজির মতো মটরশুঁটিও চোখের পক্ষে খুব উপকারী। এতে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শিশু থেকে বয়স্ক—সবার চোখের সুস্থতা রক্ষা করে। তাই শীতকালে বাচ্চাদের খাবারের তালিকায় অল্প করে কড়াইশুঁটি রাখলে ভালো হয়।
৭. হাড় মজবুত করে
মটরশুঁটিতে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন হাড়কে শক্তিশালী করে। ফলে সহজে হাড় ভাঙার সম্ভাবনা কমে এবং আঘাতে চিড় ধরার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। বৃদ্ধ বয়সেও এটি হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়ক।
আরও পড়ুন
Recipe: গরম ভাতে রাখুন নতুন স্বাদ, ‘ঝটপট’ বানিয়ে ফেলুন পুর ভরা সিম ভাজা
৮. ইমিউনিটি বাড়িয়ে অসুস্থতা প্রতিরোধ
শীতে ঠান্ডা-কাশির মতো সমস্যার প্রকোপ বাড়ে। কড়াইশুঁটি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে সাধারণ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
আরও পড়ুন
Recipe: গরম ভাতে রাখুন নতুন স্বাদ, ‘ঝটপট’ বানিয়ে ফেলুন পুর ভরা সিম ভাজা
উপসংহার
শীতের দিনে সেদ্ধ কড়াইশুঁটি অল্প পরিমাণে নিয়মিত খেলে শরীর পায় প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিনসহ নানা জরুরি পুষ্টি। এটি হৃদযন্ত্র, চোখ, হাড় ও ইমিউনিটি—সবকিছুর জন্যই উপকারী। তবে পরিমিত খাওয়াই ভালো, কারণ অতিরিক্ত খেলে পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
শীতের পাতে তাই রাখতে পারেন এই ছোট, পুষ্টিকর কিন্তু শক্তিশালী সবজিটি—কড়াইশুঁটি।
আরও পড়ুন
কোন দিনে জন্মালে শিশুরা পান অতিরিক্ত প্রতিভা ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ