‘বন্ধুকে হারালাম’— ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে ভেঙে পড়লেন বিশ্বজিৎ, স্মৃতিচারণে উঠে এল অজানা বহু গল্প

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ শিল্পীজগৎ। তবে এই শোকের মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়েছেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় ছয় দশকের বন্ধুত্ব— যার শেষ দেখা আর হল না। ধর্মেন্দ্রর চিতা জ্বলতে থাকা অবস্থায় পৌঁছে সেই দৃশ্য চোখে পড়তেই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি তিনি। তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে এল সেই সময়ের বলিউড, হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের উষ্ণতা এবং দুই তারকার ব্যক্তিগত বন্ধনের বহু অজানা অধ্যায়।

বন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা হয়নি
বিশ্বজিৎ জানান, ধর্মেন্দ্রর অসুস্থতার কারণে বহুদিন তাঁদের দেখা হয়নি। শেষবার যেন কিছু কথা বলা বা দেখা করার আশা ছিল, বিশেষত ৮ ডিসেম্বর ধর্মেন্দ্রর জন্মদিনে। ‘‘ওর ৮, আমার ১৪— পিঠোপিঠি জন্মদিন। ভেবেছিলাম দেখা করব। কিন্তু আর হল না,’’ বললেন তিনি।

বৈদ্যুতিক আলোয় সুপারস্টার, অন্তরে সরল ‘মাটির ছেলে’
ধর্মেন্দ্র ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। কিন্তু বিশ্বজিতের কাছে তিনি ছিলেন আগে বন্ধু, পরে সুপারস্টার। স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ধর্মেন্দ্রর সততা, নির্ভীকতা ও স্পষ্টবাদিতা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।

তিনি বলেন, ‘‘অহংকারী মানুষ সহ্য করত না ধরম। যত বড় মানুষই হোক, কখনও চাটুকারিতা করেনি।’’ একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, অনেক সময় টেকনিশিয়ানরা পাওনা না পেলে ধর্মেন্দ্র প্রযোজককে সোজাসুজি বলতেন— ‘‘আগে টাকাটা মেটান, তারপর শুটিং হবে।’’

হেমা মালিনী, সানি-ববি— শোকে বিধ্বস্ত পুরো পরিবার
ধর্মেন্দ্রর শেষযাত্রায় পৌঁছে বিশ্বজিৎ দেখেন, ববি ও সানি দু’জনেই ভেঙে পড়েছেন। ‘‘আমার কাঁধে মাথা রেখে হাউহাউ করে কাঁদছিল ওরা। ওদের দেখে আমিও কাঁদছিলাম,’’ বলেন বিশ্বজিৎ।

তিনি আরও জানান, সানি সেই সময় অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন— যখন ছোটবেলায় ‘ইশক পর জোর নেহি’ ছবির সেটে বাবা ধর্মেন্দ্র তাঁকে কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে যেতেন।

হেমা মালিনীও সেদিন পুরনো দিনগুলোর কথা তুলেছিলেন। ‘‘দেখে মনে হল, উনি অনেকটাই নিজেকে সামলে নিয়েছেন,’’ বলেন বিশ্বজিৎ।

পাঁচ দশকের সখ্য: সিনেমা থেকে বাস্তবের গল্প
১৯৭৫ সালে শোলে মুক্তির সেই বছরেই বিশ্বজিতের পরিচালনায় ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী ও শত্রুঘ্ন সিনহা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। ‘‘লোকজন ভাবত আমাদের মধ্যে রেষারেষি থাকবে। কিন্তু প্রতিযোগিতার চাইতে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল বেশি,’’ জানান তিনি।

ধর্মেন্দ্রর অভিনীত ফুল অউর পত্থর এবং হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের সত্যকাম— এই দুটি ছবির প্রশংসা বিশেষভাবে করেন। সত্যকামকে তিনি অভিনেতার সবচেয়ে অফবিট এবং শক্তিশালী কাজ বলে উল্লেখ করেন।

ফার্মহাউস, আতিথেয়তা আর বন্ধুবৎসল ধরম
ধর্মেন্দ্রর আতিথেয়তা ছিল কিংবদন্তির মতোই। তাঁর ফার্মহাউসে গেলে ‘সরসো কি শাক’ আর ‘মকাই কি রোটি’ ছিল বারের মতো পরিবেশিত মেনু। গরমের শুটিংয়ে ছাঁস এলে কেয়ারটেকারকে বলতেন, ‘‘আগে বিশুকে দে, তারপর আমাকে দিস।’’ ‘বিশু’— এই নামেই ডাকতেন তিনি বিশ্বজিৎকে।

শেষ মেসেজ, শেষ আশা
ধর্মেন্দ্রর অসুস্থতার সময় প্রতিদিন ভোরে “গেট ওয়েল সুন, তুম জিও হাজারো সাল’’ লিখে মেসেজ পাঠাতেন বিশ্বজিৎ। তাঁর ছায়াসঙ্গী জয়রাজ তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি তো আজ ভোরেও মেসেজ করেছেন,’’— তারপরই জোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর সানিকে সান্ত্বনা দিতে বিশ্বজিৎ বলেন,
“চিন্তা কোরো না, তোমাদের বাবা রথে চেপে স্বর্গযাত্রা করছেন। ও সেখানে রয়্যাল রিসেপশন পাবে।”
সানির মুখে তখন একটাই কথা—
“Yes, you are right. Papa was royal.”

শেষ ছবি— আর দেখা হল না
বিশ্বজিৎ পরিচালিত তাঁর শেষ ছবি অগ্নিযুগ: দ্য ফায়ার-এ অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। তিনি নিজের অভিনীত অংশ দেখতে চেয়েছিলেন। পরিচালক বন্ধুটি চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে সেটা দেখাতে পারেননি— থেকে গেল আজীবনের এক আক্ষেপ।

ধর্মেন্দ্র— এক মাটির ছেলে থেকে বলিউডের ‘হি-ম্যান’। তাঁর যাত্রা যেমন উজ্জ্বল, তেমনই হৃদয়ের মমতায় ভরা। আর সেই মানুষটির প্রয়াণে বিশ্বজিতের বুকের ভেতর আজ গভীর শূন্যতা। কারণ, তাঁর কাছে ধর্মেন্দ্র ছিলেন শুধু এক তারকা নয়, ছিলেন আজীবন-জাগা এক অমূল্য বন্ধুত্বের নাম।

আরও পড়ুন
Sohini: শীতের আলতো ছোঁয়ায় কৈশোর ফিরে পেলেন সোহিনী, ভাগ করে নিলেন বিশেষ ভিডিও

শুধু হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় না, জোয়ান খেলে শরীরের অনেক সমস্যা নিবারণ হয় মুখরোচক বাদাম চিক্কি খেতে দারুন, বাড়িতেই তৈরী হবে, জানুন রেসিপি এইভাবে তেজপাতা পোড়ালে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে 5 Best Night Creams ৪ মাসের শিশু ২৪০ কোটির মালিক