গত সোমবার, ২৪ নভেম্বর প্রয়াত হয়েছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। তাঁর মৃত্যু দেশজুড়ে শোকের স্রোত বইয়ে দিলেও, সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তাঁর শেষযাত্রাকে ঘিরে নীরবতা ও অতিরিক্ত গোপনীয়তা। দীর্ঘদিন ধরে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ হিসেবে লক্ষ-কোটি দর্শকের মনে রাজ করা অভিনেতার শেষ বিদায়ে কেন কোনও উন্মুক্ত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বা ভক্তদের শেষবার দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি—এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, সমালোচনাও হয়েছে প্রবলভাবে।
এই বিতর্কের মাঝেই মুখ খুললেন ধর্মেন্দ্রর দ্বিতীয় স্ত্রী, অভিনেত্রী ও সাংসদ হেমা মালিনী। ওমানের পরিচালক হামাদ আল রিয়ামির কাছে তিনি জানান, গোপনীয়তার সিদ্ধান্ত পরিবারের। তবে এর পেছনে রয়েছে প্রয়াত অভিনেতার ইচ্ছা, তাঁর ব্যক্তিগত বেদনা এবং অসহায়তার গভীর কারণ।
ধর্মেন্দ্রর শেষদিনের যন্ত্রণা লুকোনোর ইচ্ছা
হেমা মালিনী পরিচালকের সঙ্গে কথোপকথনে জানান, জীবনের শেষ কয়েক মাস ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। দুর্বল শরীর, ক্ষীণ চেহারা—এসব তিনি কখনও প্রকাশ্যে আনতে চাননি। এমনকী খুব ঘনিষ্ঠদের কাছেও নিজের অসহায়তার কথা লুকিয়ে রাখতেন তিনি। তাই মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে পরিবার চেয়েছিল সব অনুষ্ঠান শান্ত, সরল ও ব্যক্তিগতভাবে সম্পন্ন করতে।
হেমার কথায়,
“ধর্মজির দুর্বল শরীর দেখে তুমি সহ্য করতে পারতে না, হামাদ। আমরা নিজেরাও তাঁকে এভাবে দেখতে পারছিলাম না। তাঁর ইচ্ছাই ছিল, এই অবস্থা যেন বাইরে না যায়।”
চোখে জল নিয়ে হেমার উপলব্ধি—তাঁর সারাজীবনের শক্তিশালী, প্রাণবন্ত, সুদর্শন ইমেজ যেন কোনওভাবেই দুঃখ-ব্যথার ছবি দিয়ে কলুষিত না হয়। পরিবারের সিদ্ধান্ত তাই অভিনেতার জীবদ্দশার ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়ারই অংশ।
৩০ সেপ্টেম্বরের শেষ দেখা এবং তিন দিন পরের সাক্ষাৎ
পরিচালক হামাদ আল রিয়ামি জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি শেষবার ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে দেখা করেন জুহুর বাংলোয়। মৃত্যুর তিন দিন পর হেমা মালিনীর সঙ্গে আবার দেখা করেন তিনি। পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সাক্ষাৎ ও হেমার বক্তব্য বিশদে শেয়ার করেন, যা থেকে প্রকাশ্যে আসে গোপনীয়তার কারণ।
রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক
ধর্মেন্দ্রর মতো এক বিশাল ব্যক্তিত্বের বিদায়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না মেলা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভক্তরা। বলিউডের সূত্র জানায়, প্রথমে গান স্যালুটসহ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে তাতে আপত্তি তোলে দেওল পরিবার। কারণটি একই—অনুষ্ঠানকে মিডিয়ার সামনে আনতে তাঁরা চাননি, প্রয়াত অভিনেতার ইচ্ছা অনুসারে সবটুকুই ব্যক্তিগত রাখতে চেয়েছিলেন।
ভক্তদের আক্ষেপ, পরিবারের বেদনা
প্রিয় তারকার শেষযাত্রায় ভক্তরা অংশ নিতে না পারায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন অনেকেই। তবে হেমার বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বোঝা যাচ্ছে—এর কেন্দ্রে ছিল পরিবারের গভীর বেদনা এবং ধর্মেন্দ্রর আজীবন লালিত ব্যক্তিগত মর্যাদার রক্ষা।
‘হি-ম্যান’-এর রাজকীয় জীবনযাত্রার মতোই তাঁর বিদায়ও ছিল নীরব, সংযত, ব্যক্তিগত—তবে এর ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক কিংবদন্তির শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর নির্মম সত্য।
আরও পড়ুন
Samantha-Raj: দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে অভিনেত্রী সামান্থা, জেনে নিন পাত্রের পরিচয়