বলিউডের ‘হি-ম্যান’ বলতে প্রথমেই যে নামটি চোখে ভাসে, তিনি ধর্মেন্দ্র। প্রায় ছ’ফুট উচ্চতা, পেটানো শরীর, মনকাড়া হাসি— ষাট-সত্তরের দশকের ভারতীয় সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি এক আলাদা আবেদন তৈরি করেছিল। রাজেশ খন্না বা অমিতাভ বচ্চনের আগের যুগে দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার, শাম্মি কপূরের মতো দাপুটে তারকাদের ভিড়েও তিনি নিজের ব্যক্তিত্ব ও স্টাইল দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন আলাদা। অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি ধর্মেন্দ্রর জনপ্রিয়তার বড় অংশ জুড়ে ছিল তাঁর ফ্যাশন সেন্স— একেবারেই নিজের মতো, সময়ের চেয়ে এগিয়ে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
⭐ ডেনিম-অন-ডেনিম: সময়ের আগে ফ্যাশন ট্রেন্ড

আজ ‘ডেনিম অন ডেনিম’ ট্রেন্ড হলেও ধর্মেন্দ্র বহু আগেই পর্দায় সেই স্টাইলকে জনপ্রিয় করে ফেলেছিলেন। শোলে ছবিতে বীরুর জিন্স, নীল টি-শার্ট আর ডেনিম জ্যাকেট— আজও যে লুককে দর্শক ভুলতে পারেন না। সেই সময়ের বলিউডে যখন নায়করা মূলত স্যুট বা ফরম্যাল পরতেন, ধর্মেন্দ্রর ডেনিম-চয়েস যুবসমাজকে নতুন পথে ভাবতে শিখিয়েছিল।
⭐ জ্যাকেটের প্রতি অগাধ প্রেম
চামড়ার ডবল-ব্রেস্টেড ব্লেজ়ার, ট্যুইড জ্যাকেট, নেহরু জ্যাকেট, স্যুট কিংবা ডেনিম— প্রায় প্রতিটি ছবিতেই তাঁকে কোনো না কোনো জ্যাকেটে দেখা যেত। স্টাইলিশ জ্যাকেট তাঁর পর্দার পরিচয়ের অন্যতম অংশ হয়ে ওঠে। বলা যায়, জ্যাকেট ধর্মেন্দ্রর ‘সিগনেচার লুক’-এরই একটি।
⭐ টাইয়ের বদলে বো-টাই ও স্কার্ফ— পরীক্ষায় সাহসী ধর্মেন্দ্র
সে সময়ে বলিউডে নায়ক মানেই স্যুট-টাই। কিন্তু ধর্মেন্দ্র টাই নিয়েও পরীক্ষা করতে কুণ্ঠা করেননি।
বো-টাই ছিল তাঁর প্রিয়
বিভিন্ন রঙের স্কার্ফ টাইয়ের জায়গায় ব্যবহার করেছেন
সাধারণ শার্ট-ট্রাউজ়ারের সঙ্গেও স্কার্ফের গিঁট বেঁধে হাজির হয়েছেন
তাঁর এই স্টাইল তরুণদের মধ্যে পশ্চিমি ফ্যাশনের নতুন প্রবাহ আনে।
⭐ হাই-নেক সোয়েটার ও গলায় বাঁধা সোয়েটার— যা হয়ে উঠেছিল ট্রেন্ড
গোলগলা সোয়েটার, হাই-নেক উলের পোশাক— সবেতেই তাঁকে দেখেছি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর গলায় সোয়েটার বাঁধা লুক। পিঠে ফেলা সোয়েটারের হাতা দু’টি গলায় বাঁধা— সহজ অথচ ক্লাসিক এ স্টাইল অসংখ্য যুবক নকল করেছিলেন।
⭐ ফিটেড শার্ট: কমফোর্ট ও স্টাইলের মেলবন্ধন
ডেনিম শার্ট, চেক, স্ট্রাইপ, প্রিন্টেড— বিভিন্ন স্টাইলের শার্টে ধর্মেন্দ্র ছিলেন সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ। ষাটের দশকে তাঁর প্রিন্টেড শার্ট স্টাইল ছিল বিপুল জনপ্রিয়। ফ্যাশনে আরামে থাকার পাশাপাশি তিনি নতুনত্ব আনতে ভালোবাসতেন।
⭐ অস্বাভাবিক পোশাকেও আত্মবিশ্বাস— কারণ তিনি ধর্মেন্দ্র
ধর্মেন্দ্র প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে পোশাক পরতে ভয় পাননি।
ধরমবীর–এ গ্ল্যাডিয়েটরদের আদলে ঊরু-উন্মুক্ত পোশাক
স্লিভলেস জ্যাকেট, লেদারের আঁটো প্যান্ট
গলায় বিডসের মালা, চওড়া বেল্ট— রাগেড স্টাইল
এসবই প্রমাণ করে, ফ্যাশন তাঁর কাছে ছিল চরিত্রের অংশ— ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।
⭐ লুঙ্গি-কুর্তা থেকে ধুতি-পাঞ্জাবি— ভারতীয় পোশাকেও সমান সাবলীল

যদিও তাঁকে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে কম দেখা গেছে, তবে যখনই ধুতি-পাঞ্জাবি বা লুঙ্গিতে পর্দায় এসেছেন— ‘অনুপমা’, ‘সত্যকাম’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’— কোথাও বেমানান লাগেনি। দক্ষিণী নৃত্যশৈলীর লাল-সোনালি ধুতিতেও নেচেছেন, আর গুড্ডি-তে লুঙ্গি-কুর্তায় ছিলেন একেবারে ঘরোয়া।
⭐ আত্মবিশ্বাসই ছিল তাঁর স্টাইলের আসল চাবিকাঠি
ধর্মেন্দ্রর ফ্যাশন-স্বাক্ষর শুধু পোশাক নয়— তাঁর ব্যবহারে, শরীরী ভাষায়, পর্দার উপস্থিতিতেই ছিল আলাদা ধরনের পুরুষালি সৌন্দর্য। তিনি যে পোশাকই পরেছেন— তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরেছেন। ফলে কখনওই কিছু বেমানান লাগেনি।
🔚 উপসংহার
ধর্মেন্দ্রর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট ছিল একদিকে পাশ্চাত্য স্টাইলের সাহসী পরীক্ষা, অন্যদিকে ভারতীয় পোশাকেও স্বাভাবিক সাবলীলতা। তিনি শুধু অভিনয়ের নায়ক নন— বলিউডের অন্যতম বড় স্টাইল আইকন। তাঁর পোশাকে যে আত্মবিশ্বাস, সেটিই তাঁকে আলাদা করে চেনার মতো করে তোলে।
