তার ডাকে উপস্থিত থাকতো পুরো বলিউড! ভাইজানের সঙ্গে মিত্রতার মাসুল কি দিতে হয়েছে বাবাকে?

kmc 20241014 213354 fVSVVf1r9I iXspho0n72

মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই চলেছে হত্যাকান্ড। রাজ্যের আগের প্রধানমন্ত্রী এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে নিশানা করে গুলি নিক্ষেপ করা হয়। শনিবার নির্মল নগরে ছেলের অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময়ই তার দেহে পরপর গুলি লাগে। বাবা গাড়িতে ওঠার সুযোগও পায়নি। গুলি বিধ্বস্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলেন সিদ্দিক। প্রচন্ড খারাপ অবস্থায় তাকে পরিত্রান করে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষে বাঁচানো যায়নি তাকে। চিকিৎসা করা অবস্থাতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বান্দ্রার নির্মল নগরে কোলগেট ময়দানের নিকটে তার ছেলে বিধায়ক জিশান সিদ্দিকির অফিসের বাইরে এনসিপি দলনেতা কে নিশানা করে দু-তিন জন অজ্ঞাত ব্যক্তি দুই-তিন বার গুলি চালায় বলে শোনা যায়। মুম্বাইয়ের পুলিশ বলে, মহারাষ্ট্রের এনসিপি এর দলনেতার হত্যার সাথে গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের সভা সংযুক্ত। রবিবার সেই হত্যার জন্য অঙ্গীকার করে নিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং। গোষ্ঠীর একজন মেম্বার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি শেয়ার করে দাবি করেছেন, সালমানের সাথে বাবার ভালোসম্পর্ক এই খুনের কারণ। ওই শেয়ারে দাবি করা হয়েছে, বাবা সিদ্দিকি এক সময় দাউদ ইব্রাহিমের কাছের মানুষ ছিলেন। সালমান খান বা দাউদকে যারা যারা সহায়তা করেন, তাদেরকে এই শেয়ারে ওয়ার্নিং করা হয়েছে। তাহলে কি সালমানের সাথে মিত্র তার জন্য নিজের জীবনের বিনিময় দিতে হলো বাবা সিদ্দিকিকে?

যার মৃত্যু নিয়ে এত কোলাহল,ওই সিদ্দিকি বিহারের বাসিন্দা। অল্প বয়স থেকেই রাজনৈতিক জীবন যাপন আরম্ভ করেন তিনি। সত্তর দশকে কংগ্রেসের ছাত্রগোষ্ঠী থেকে মূল রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। কংগ্রেস ছাত্র শাখা আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়াতে যোগদান করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন সিদ্দিকি।

তারপর তিনি মুম্বাইয়ে প্রবেশ করেন। সর্বতম তিনি মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে কর্পোরেটর হিসাবে মনোনয়ন হয়। ১৯৯৯ সালে তিনি প্রথমবার বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান কংগ্রেসের হয়ে। বিজয়ী হন বান্দ্রা অধিবাসী এই দলনেতা। এরপর তিনি ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনবার ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিধানসভা ভোটে বান্দ্রা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে পরাজয় হন সিদ্দিকি।

আগের ফেব্রুয়ারি মাসে কংগ্রেসের সাথে দীর্ঘ বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় সিদ্দিকিকের। যোগদান করেন অজিত পওয়ারের শিবিরে। তবে তার আগে প্রায় পাঁচ দশক কংগ্রেসের সাথে সিদ্দিকি ছিলেন। সিদ্দিকের পুত্র জিশান, মুম্বাইয়ের বান্দ্রা বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক। দল বিরোধী কাজকর্মের অভিযোগে আগস্ট মাসে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করা হয়।

বাবা সিদ্দিকি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নয়, বলিউডের তারকাদের সাথে তার ওঠাবসা, অভিনেতাদের ভিড়ে অবাধ গতির জন্যই তিনি বেশি বিখ্যাত ছিলেন। এক কথায় তার ডাকেই পুরো বলিউডের তারকারা উপস্থিত হতো। প্রত্যেক বছর ইফতারে পার্টি আয়োজন করেতেন বাবা সিদ্দিকি। সেই পার্টিতে বহু লোকের আগমন ঘটতো। রাজনীতি দুনিয়ার মানুষ হলেও বলিউডের সাথে তার মিত্রতা বার বার দেখা গেছে।

বাবা সিদ্দিকিকের সাথে অনেকদিনের ভালো সম্পর্ক সালমান খানের। বাবার সিদ্দিকি গুলি লেগে আহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে শুটিং ছেড়ে খুব শীঘ্রই সালমান খান লীলাবতী হাসপাতালে উপস্থিত হন। তার আয়োজন করা পার্টিতে শাহরুখ খানের সাথে বিভেদের চিহ্ন মুছে ফেলেছিল সালমান। বি টাউনে প্রায়ই কান্ডারির ভূমিকা পালন করে এসেছেন বাবা সিদ্দিকি। পুরনো কাহিনী ঘাটলে দেখা যাবে, ক্যাটরিনা কাইফের বার্থডে পার্টিতে তর্কে জড়িয়েছিলেন বলিউডের দুই তারকা খান, শাহরুখ ও সালমান। এরপর থেকে দুজনের বিবাদের ফলে বলিউড ভাগ হয়ে যায় দুই খান গোষ্ঠীতে।

এই পরিস্থিতিতে দুই খানকে মিলিত করার জন্য আসরে নামেন সিদ্দিকি। বাবা সিদ্দিকির প্রচেষ্টায় আবার মিত্রতা গড়ে ওঠে শাহরুখ খান ও সালমান খানের মধ্যে। ২০১৩ সালের তার আয়োজন করা এক পার্টিতে দুই খানের মিত্রতা গড়ে তোলে বাবা সিদ্ধিকি। দুজনে একসাথে কাজ করাও আরম্ভ করেন।
সিদ্দিকির হত্যা ঘটনায় এখনো পর্যন্ত দুজনকে মাত্র এরেস্ট করা হয়েছে। অপরাধীদের নাম কর্নেল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপ। একজন উত্তর প্রদেশের নিবাসিনী আরেকজন হরিয়ানার নিবাসিনী। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় দুজনেই স্বীকার করে নেয়,তারা বিশ্নোই গ্যাংয়ের মেম্বার।
সালমান খানের সাথে বিশ্নোই গ্যাংয়ের বিরোধী দীর্ঘদিনের । সিদ্দিকি হত্যার সাথে সেই বিরোধী কোন সম্পর্ক রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।