সোনা—শুধু একটি ধাতু নয়, ভারতের সংস্কৃতি, ঐশ্বর্য এবং আবেগের প্রতীক। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত, এই উজ্জ্বল ধাতু কেবল অলঙ্কার নয়, বরং সম্পদ, ভাগ্য এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বরণ করা হয়।
বর্তমানে এক তোলা সোনার দাম ১.২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, যে সোনার গয়না আপনি কিনছেন, তার প্রকৃত খরচের মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন কিছু দিক যা সাধারণ মানুষ প্রায়ই বুঝতে পারেন না?
বিশুদ্ধতা বনাম ব্যবহারযোগ্যতা

সোনার বিশুদ্ধতা সাধারণত ক্যারাটে পরিমাপ করা হয়। ২৪ ক্যারাট মানে ১০০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা। কিন্তু এটি এতটাই নরম যে, গয়না তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ২২ ক্যারাট বা ১৮ ক্যারাট সোনায় মেশানো হয় অন্যান্য ধাতু যেমন তামা, রুপো, দস্তা বা ক্যাডমিয়াম, যা সোনাকে শক্ত করে এবং টেকসই করে তোলে।

এই মিশ্রণের ফলেই বিশুদ্ধতা কমে যায়, কিন্তু অলঙ্কারের স্থায়িত্ব বাড়ে। অর্থাৎ, আপনি যে সোনার গয়না পরছেন, তা আসলে সম্পূর্ণ খাঁটি নয়।

গয়না তৈরির সময় সোনা নষ্ট হয়

ওয়ারাঙ্গলের স্বর্ণকার সন্তোষ জানিয়েছেন, ২২ ক্যারাট সোনা দিয়ে তৈরি প্রতি দশ গ্রাম গহনার জন্য প্রায় এক গ্রাম সোনা নষ্ট হয়। অর্থাৎ, আপনি যদি ১০ গ্রাম সোনার চেন বানাতে চান, তবে কার্যত ১১ গ্রাম সোনা খরচ হবে, যদিও চূড়ান্ত পণ্যটি ১০ গ্রামই থাকবে।
এটি “ওয়েস্টেজ” নামে পরিচিত। এই ক্ষতি গ্রাহককেই বহন করতে হয়, যা গয়না কেনার সময় প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যায়।
বিক্রির সময়ও কমে যায় ওজন

গয়না বিক্রির সময় অনেক ক্ষেত্রেই সেটি গলিয়ে ওজন করা হয়। ২৪ ক্যারাট সোনায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়ায় প্রায় এক গ্রাম কেটে নেওয়া হয়। কারণ, গলানোর সময় যুক্ত ধাতুগুলি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বার বা বাটটি আগের গয়নার তুলনায় সামান্য হালকা হয়।
এই ক্ষতি হিসেব না রাখলে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে খাঁটি সোনা

অনেকে মনে করেন গয়না গলিয়ে খাঁটি সোনার বার বানানো বিনিয়োগের দিক থেকে লাভজনক। কারণ এতে মেকিং চার্জ বাদ যায় এবং সোনার বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ধারণা না থাকলে এতে ক্ষতিও হতে পারে।

কারণ, যদি সোনার মূল্য প্রতি গ্রামে ১৪,০০০ টাকায় পৌঁছায়, তবে সামান্য পরিমাণ ক্ষয়ও কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
শেষকথা
ভারতে সোনা শুধু গয়না নয়, এটি একটি বিশ্বাস, এক ধরনের আবেগ। তবে সোনার প্রকৃত মূল্য বুঝতে হলে শুধু দাম নয়, এর বিশুদ্ধতা, গলানোর ক্ষয় ও বাস্তব ওজনের হিসেবও জানা জরুরি। কারণ, সোনা যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, প্রকৃত মূল্য নির্ভর করে তার খাঁটি রূপের উপর।
FAQ
প্রশ্ন ১: সোনার বিশুদ্ধতা কিসে পরিমাপ করা হয়?
উত্তর: সোনার বিশুদ্ধতা সাধারণত ক্যারাট (Karat) বা শতাংশে পরিমাপ করা হয়। ২৪ ক্যারাট মানে ১০০% খাঁটি সোনা।
আরও পড়ুন
সোনার দোলাচল বাজার: বাড়বে দাম, নাকি কমবে?
প্রশ্ন ২: ২২ ক্যারাট সোনা মানে কী?
উত্তর: ২২ ক্যারাট সোনা মানে ৯১.৬৭% খাঁটি সোনা এবং বাকিটা তামা, রুপো বা দস্তার মতো ধাতু।
প্রশ্ন ৩: গয়না বানানোর সময় সোনা কেন নষ্ট হয়?
উত্তর: গলানো ও আকার দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম ধাতব কণিকা হারিয়ে যায়, যা “ওয়েস্টেজ” নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন
গয়না হারিয়ে গেলে দায় নেই ব্যাঙ্কের! ব্যাঙ্ক লকার কতটা নিরাপদ? জানুন ক্ষতিপূরণ ও নতুন নিয়ম
প্রশ্ন ৪: প্রতি ১০ গ্রাম গয়না বানাতে কতটা সোনা নষ্ট হয়?
উত্তর: প্রায় এক গ্রাম পর্যন্ত সোনা নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন স্বর্ণকাররা।
প্রশ্ন ৫: ২৪ ক্যারাট সোনা দিয়ে কি গয়না তৈরি করা যায়?
উত্তর: না, কারণ এটি খুব নরম এবং সহজেই বেঁকে বা ভেঙে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৬: গয়না বিক্রির সময় কেন ওজন কমে যায়?
উত্তর: গলানোর সময় যুক্ত অন্যান্য ধাতু বাষ্পীভূত হয়ে যায়, ফলে ওজন কিছুটা কমে যায়।
প্রশ্ন ৭: বিনিয়োগের জন্য সোনার কোন রূপটি ভালো?
উত্তর: খাঁটি সোনার বার বা কয়েন বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, কারণ এতে মেকিং চার্জ থাকে না।
প্রশ্ন ৮: সোনার গয়নার দাম নির্ধারণে কী কী বিষয় প্রভাব ফেলে?
উত্তর: সোনার দৈনিক বাজারমূল্য, বিশুদ্ধতা (ক্যারাট), ওয়েস্টেজ ও মেকিং চার্জ—সবই দামের উপর প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন ৯: সোনা গলালে কি লাভ হয়?
উত্তর: কখনও লাভ হয়, আবার কখনও ক্ষতি। বিশুদ্ধতা বাড়ে, কিন্তু ওজন কিছুটা কমে যেতে পারে।
প্রশ্ন ১০: বর্তমানে এক তোলা সোনার দাম কত?
উত্তর: এখন এক তোলা (১১.৬৬ গ্রাম) সোনার দাম প্রায় ১.২০ লাখ টাকারও বেশি, যা বাজার অনুযায়ী পরিবর্তনশীল।
#GoldPurity #JewelleryFacts

