পুরুষকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করছেন তো? আরজি কর নিয়ে সমাজকে আয়না দেখালেন বৈশাখী

বর্তমানে আর জি কর হসপিটালের কর্মকাণ্ড নিয়ে পুরো দেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ আঙুল তুলছে প্রশাসনের দিকে, পথে নেমেছেন তারা, শুধুমাত্র তাই নয় সাধারণ মানুষের সাথে সাথে বিভিন্ন ও টলি অভিনেতা অভিনেত্রীদের‌ও রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। প্রত্যেকটি মানুষ চান অত্যাচারীর বিচার হোক এরই সঙ্গে সাধারণ মানুষ বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ চায় তারা। এই ঘটনার বিষয়ে আরজি করের প্রিন্সিপাল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কি কি বলেছেন জেনে নিন। একটি সংবাদ মাধ্যমে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান খুব ইমারজেন্সি ছাড়া মেয়েদের কোনো নাইট শিফট দেয়া যাবে না।

মূল বক্তব্য হলো, আসলে আমরা আধুনিক যুগে বাস করেও পূর্বের মতো রয়ে গেছি, এই সমাজ এতটাই নিকৃষ্ট যে একটি নারীকে সবসময় ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখে এসেছেন পুরুষ জাতি। একটি মেয়ের কাছে তার শরীরই সবথেকে বড় ‌‌ দামি জিনিস, এটা নষ্ট করতে পারলেই যেন কিছু কিছু পুরুষ জাতির তৃপ্তি হয়। পূর্বে থেকেই আমরা দেখে আসছি কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে তারা শুরু করে দেয় ধস্তাধস্তি, ও মেয়েদের সম্মান হানী করে। চারিদিকে এত ধর্ষণ দেখে এটাই বোঝা যায় যে নারীদের কোন স্বাধীনতা নেই ,পুরুষদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাতে না পারলেই তোমাকে নির্যাতিত হতে হবে।

বৈশাখী বলেন হাসপাতালের বড়মাথা হয়েও কেন তিনি সন্দীপ ঘোষ নির্যাতিতার মা বাবার সাথে একবারও দেখা করলেন না, এখানে তার অনেক হেঁয়ালি রয়েছে। তিনি পুরো বিষয়টাকে যেভাবে উপস্থাপন করছেন তা দেখে এটা জলের মতো পরিষ্কার যে এই ধরনের ঘটনা এটা প্রথম নয়, হয়তো এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে যেটা টাকা পয়সার জোরে চাপা পড়ে গেছে। আসলে সমাজ সঞ্জয়দের মতো নিকৃষ্ট লোকের জন্য যতটা খারাপ হচ্ছে, তার থেকেও বেশি খারাপ হচ্ছে আমাদের চুপ থাকার জন্য, কোন প্রতিবাদ না জানানোর জন্য, আমাদের এই চুপ থাকার জন্যই এই সমাজে হাজার হাজার তিলোত্তমাকে ধর্ষণ হতে হয় ,প্রাণ হারাতে হয়। এখন হয়তো অনেকেই বলছে আমরা জানতাম আগে থেকেই কারা এর সাথে যুক্ত আসলে তারাও কম দোষী নয় কারণ তারা সব জেনে বুঝেও এতদিন চুপ ছিল।

অনেক আন্দোলন, অনেক কষ্টের পরে নারী ও পুরুষের অধিকার সমান হয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের নিকৃষ্ট মানের ঘটনা দেখে এখন মনে হচ্ছে নারীরা পিছিয়েই আছে, নারীদের কোন স্বাধীনতা নেই। ২০২৪ এ দাঁড়িয়েও আমরা মেয়েদের নাইট শিফট দিতে ভয় পাচ্ছি, শুধুমাত্র তাই নয় দিনের বেলাতেও আমরা সেভ নই। আমরা মেয়েরা যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে আসতে পারছি ততক্ষণ আমরা সুরক্ষিত নই।

শোনা যাচ্ছে মেয়েদের খুব দরকার ছাড়া নাইট ডিউটি দেওয়া হবে না, এই কথাটিতে এটাই বোঝা গেল মেয়েরা পরবর্তীতেও সুরক্ষিত থাকবে না, তাদেরকে ভয়ে ভয়েই থাকতে হবে। মেয়েদের নাইট ডিউটি দেওয়ার কথা না ভেবে বরং এটার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল যেন মেয়েদের পরবর্তীতে নাইট ডিউটি থাকলেও যেন কোন রিক্স না থাকে। সমাজে এমন বহু পুরুষ রয়েছেন যারা কিনা ট্রেনে বাসে পর্যন্ত মেয়েদের গায়ে হাত দিতে দুবার ভাবেন না। তাহলে আমাদের এই সমাজে মেয়েরা কোথায় স্বাধীন? আসলে সমাজ ঠিক করতে গেলে, এই ধরনের নিকৃষ্ট কাজ বন্ধ করতে গেলে সবার প্রথমে নিজের বাড়ির পুরুষটিকে সঠিক শিক্ষা দিন। যেদিন প্রত্যেকটি পুরুষ মন থেকে এটা মেনে নিতে পারবে যে মেয়েদের সম্মান করা উচিত, তারাও কারুর মা ,কারোর বোন ,কারোর প্রেমিকা ,কারোর স্ত্রী সেদিনই এই সমাজে নারীরা স্বাধীন অনুভব করবেন।

আরও পড়ুন,
*‘পুরুষ মানুষদেরও একটু লজ্জা হওয়া উচিত’! আরজি কর নিয়ে সরব এক মেয়ের বাবা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়