ভারতে যারা নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করেন, তারা জানেন ট্রেনে লাগেজ বহনের ক্ষেত্রে বিমানযাত্রার মতো কড়া বিধিনিষেধ নেই। ফলে অনেকেই ভাবেন, ট্রেনে প্রায় সবকিছুই বহন করা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ভারতীয় রেলওয়ে ট্রেনে একটি সাধারণ ফল — নারকেল বহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই খবর শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন, কারণ নারকেল তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। পুজো, পূর্ণিমা বা যেকোনও শুভ অনুষ্ঠানে নারকেলের ব্যবহার অপরিহার্য। তবু রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নারকেল কখনও কখনও হাজার হাজার যাত্রীর জীবনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
কেন বিপজ্জনক নারকেল?
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নারকেলের ভেতরে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের চাপ থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে রোদে বা গরম পরিবেশে রাখলে এই চাপ আরও বেড়ে যায়। ট্রেনের বগির ভিতরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে নারকেল ফেটে যেতে পারে। এতে আশপাশে থাকা দাহ্য বস্তু বা বৈদ্যুতিক স্পার্কের সংস্পর্শে আগুন লাগার ঝুঁকি দেখা দেয়।
রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী (RPF) এবং অগ্নি নিরাপত্তা ইউনিট জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে নারকেলের তাপ ও চাপজনিত কারণে ছোটখাটো বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এই কারণেই ট্রেনে নারকেল বহনকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ “বিপজ্জনক পদার্থ বহন” হিসেবে বিবেচনা করছে।
রেল আইন কী বলছে?
ভারতীয় রেল আইন অনুযায়ী, যাত্রীরা কোনওভাবেই দাহ্য, বিস্ফোরক বা বিপজ্জনক পদার্থ বহন করতে পারবেন না। এর মধ্যে পড়ে—
পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন
গ্যাস সিলিন্ডার, আতশবাজি
সুগন্ধি, নেইলপলিশ রিমুভার
তেলজাত পদার্থ, এবং নারকেল
এই ধরনের জিনিস বহন করলে ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ধর্মীয় প্রয়োজনে ছাড়
তবে রেলওয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে— পুজোর জন্য এক বা দুটি নারকেল বহনে কোনও সমস্যা নেই। সাধারণত যাত্রীরা মূর্তি, ফুল বা নৈবেদ্যের সঙ্গে একটি নারকেল বহন করেন, যা নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন কোনও যাত্রী ধর্মীয় ভ্রমণের জন্য এক ডজন বা তারও বেশি নারকেল নিয়ে ট্রেনে ওঠেন।
এতগুলো নারকেল একসঙ্গে রাখলে গ্যাসের চাপ তৈরি হয়, যা তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা
রেলওয়ে যাত্রীদের উদ্দেশে জানিয়েছে, “নিরাপত্তা নিয়ম শাস্তি নয়, সুরক্ষার জন্যই তৈরি”। তাই যাত্রার আগে লাগেজে যেন কোনও দাহ্য পদার্থ বা বিপজ্জনক জিনিস না থাকে তা নিশ্চিত করা উচিত।
নারকেল, গ্যাস, তেল বা আতশবাজির মতো জিনিস ট্রেনে নেওয়া হালকাভাবে দেখা উচিত নয়, কারণ একটি সামান্য ভুলও পুরো বগিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
উপসংহার
ভারতীয় রেলওয়ে এই নিয়ম জারি করেছে যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে। তাই ট্রেনে ওঠার আগে লাগেজে থাকা জিনিসপত্র ভালোভাবে যাচাই করুন। মনে রাখবেন, একটি ছোট অবহেলা আপনার নয়, শতাধিক যাত্রীর জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
নিরাপদ ভ্রমণই সুখকর ভ্রমণ।
FAQ
প্রশ্ন ১: ভারতীয় রেলওয়ে কি সত্যিই ট্রেনে নারকেল বহন নিষিদ্ধ করেছে?
উত্তর: হ্যাঁ, রেলওয়ে প্রচুর পরিমাণে নারকেল বহন নিষিদ্ধ করেছে নিরাপত্তার কারণে।
প্রশ্ন ২: কেন নারকেলকে বিপজ্জনক বলে গণ্য করা হয়?
উত্তর: নারকেলের ভেতরে তেল ও গ্যাসের চাপ থাকে, যা তাপে ফেটে গিয়ে আগুন লাগাতে পারে।
প্রশ্ন ৩: এক বা দুইটি নারকেল কি ট্রেনে নেওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, পুজো বা নৈবেদ্যের জন্য এক-দুটি নারকেল বহনে কোনও বাধা নেই।
প্রশ্ন ৪: অনেক নারকেল নিলে কী ধরনের বিপদ হতে পারে?
উত্তর: প্রচুর নারকেল একসঙ্গে রাখলে গ্যাসের চাপ বেড়ে ছোট বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন
১১,০০০ টাকা সস্তা হল 50MP সেলফি ক্যামেরা, 125W ফাস্ট চার্জিং সহ Motorola 5G প্রিমিয়াম স্মার্টফোন
প্রশ্ন ৫: নারকেল বহনের জন্য কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?
উত্তর: আইন অনুযায়ী ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা কারাদণ্ড হতে পারে।
প্রশ্ন ৬: এই নিষেধাজ্ঞা কি শুধু যাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য?
উত্তর: হ্যাঁ, যাত্রীর লাগেজে থাকা নারকেল বা বিপজ্জনক পদার্থ নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন ৭: নারকেল ছাড়াও কোন জিনিস ট্রেনে নেওয়া নিষিদ্ধ?
উত্তর: পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, আতশবাজি, পারফিউম, নেইলপলিশ রিমুভার ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৮: যদি ট্রেনে নারকেল ধরা পড়ে, তাহলে কী হবে?
উত্তর: RPF (রেলওয়ে পুলিশ) সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে এবং জরিমানা করতে পারে।
প্রশ্ন ৯: রেলওয়ে কেন এত কঠোর হচ্ছে এই নিয়মে?
উত্তর: যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আগুনের ঝুঁকি রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ১০: কীভাবে যাত্রীরা ঝুঁকি এড়াতে পারেন?
উত্তর: ট্রেনে ওঠার আগে লাগেজ পরীক্ষা করুন এবং কোনও দাহ্য পদার্থ বা নারকেল বেশি পরিমাণে নেবেন না।
#IndianRailways #TrainSafety #CoconutBan

