গভীর সমুদ্রে জীবন-মৃত্যুর লড়াই: গ্যালাপাগোস হাঙরের কামড়ে রক্ষা পেলেন বিজ্ঞানী মরিসিও হোয়োস

মেক্সিকোর বিখ্যাত সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী মরিসিও হোয়োসের জীবনে এমন ভয়াবহ মুহূর্ত আর কখনো ধরা দেয়নি। ত্রিশ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কোস্টারিকার কোকোস দ্বীপের গভীর সমুদ্রে তিনি যে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা তাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়।

সেপ্টেম্বরে গবেষণা সফরের সময় মাত্র তিন মিটার লম্বা এক স্ত্রী গ্যালাপাগোস হাঙরের আকস্মিক আক্রমণে তার মুখ ও মাথা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু অলৌকিকভাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই হাঙর তাকে ছেড়ে দেয়—যার জন্য আজ তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই মনে করেন।

অবিশ্বাস্য গতিতে আক্রমণ

হোয়োসের ভাষায়, হাঙরটি এত দ্রুত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যে নিজের ঘাড়ের শিরা রক্ষা করতে মাথা নাড়ানোরও সময় পাননি।

তিনি বলেন,
“হাঙরটি তার চোয়াল বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ংকর চাপ অনুভব করি। আর এক সেকেন্ড পরই সে আমাকে ছেড়ে দেয়।”

হাঙরের ২৯টি ধারালো দাঁত তার গালে ও মাথায় গভীর ক্ষত তৈরি করে। এমনকি তার ডাইভিং যন্ত্রের অক্সিজেন সরবরাহ লাইনটিও ছিঁড়ে যায়, যা তাকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

অন্ধকারে মৃত্যুযুদ্ধ

রক্তে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ায় তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। অক্সিজেন লাইন নষ্ট হয়ে গেলে তিনি বিকল্প অক্টোপাস লাইনে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেটিও সঠিকভাবে কাজ করছিল না।

সামান্য আলো দেখে তিনি বুঝতে পারেন উপরের দিকটাই মুক্তির পথ। প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খুব ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকেন যাতে হাঙরের নজর আর না পড়ে।

জীবনের শেষ মিনিট গুনতে গুনতেই জলের উপরিভাগে পৌঁছে যান তিনি।

নৌকায় উদ্ধার—কিন্তু শঙ্কা তখনও শেষ নয়

নৌকায় তুলেই চিকিৎসা শুরু করা হয়। মুখের গভীর ক্ষত দেখে ডাক্তাররা প্রথমেই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন—কারণ ক্ষতটি ছিল মস্তিষ্কের দিকে সরাসরি প্রবেশপথের মতো।

তবে ৩৪ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা সফল হয়। আশ্চর্যের বিষয়, সংক্রমণের কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি এবং তার সেরে ওঠার গতি ছিল অবিশ্বাস্য।

হাঙরকে দোষী না করে শ্রদ্ধা বাড়ালেন হোয়োস

এমন মরণঘাতী অভিজ্ঞতার পরও হোয়োস হাঙরকে দোষারোপ করেন না। বরং, তিনি মনে করেন হাঙরের আচরণ ছিল স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা প্রবৃত্তি—যেমন কুকুর হঠাৎ আক্রমণ করে আবার থেমে যায়।

হোয়োস বলেন—
“অনেকে মনে করেন হাঙর না থাকলে সমুদ্র ভালো থাকত। তারা বোঝেন না হাঙরই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে।”

গালে থাকা বড় দাগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন—
“এই দাগই প্রমাণ যে সে সেদিন আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আর এটি আমাকে হাঙর সংরক্ষণে আরও জোরালোভাবে কথা বলতে সাহায্য করবে।”

আবারও সেই হাঙরের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষা

আক্রমণের পরেও জলে ফেরার আগ্রহ হারাননি হোয়োস। তিনি ইতোমধ্যে আগামী ডাইভিং ট্রিপ পরিকল্পনা করেছেন। জানুয়ারিতে আবারও কোকোস দ্বীপে ডুব দেবেন তিনি—সেখানেই তো তার আক্রমণকারী হাঙরের বসবাস।

আশ্চর্যের বিষয়, আক্রমণের ঠিক আগেই তিনি হাঙরটির শরীরে ট্যাগ লাগাতে সক্ষম হন। ফলে আবারও তার সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সমুদ্র জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়েই তিনি আবারও গভীর জলরাশির মুখোমুখি হতে চাইছেন—যেন জীবন-মৃত্যুর সেই অভিজ্ঞতা তাকে আরও শক্ত করে তুলেছে।

FAQ

১. মরিসিও হোয়োস কে?
মরিসিও হোয়োস একজন অভিজ্ঞ সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী, যিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাঙর নিয়ে গবেষণা করছেন।

আরও পড়ুন
লালকেল্লা বিস্ফোরণ: মূল সন্দেহভাজন ডঃ উমর নবীর বাড়ি উড়িয়ে দিল নিরাপত্তা বাহিনী

২. কোথায় হোয়োস হাঙরের আক্রমণের শিকার হন?
কোস্টারিকার কোকোস দ্বীপের কাছাকাছি সমুদ্রে তিনি আক্রমণের মুখোমুখি হন।

৩. কোন প্রজাতির হাঙর তাকে আক্রমণ করেছিল?
তিন মিটার লম্বা একটি স্ত্রী গ্যালাপাগোস হাঙর তাকে কামড় দেয়।

৪. হাঙরটি কেন তাকে কামড়েছিল?
হোয়োস হাঙরের শরীরে ট্যাগ বসানোর সময় প্রাণীটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা ছিল স্বাভাবিক আচরণ।

৫. আক্রমণের সময় হোয়োস কীভাবে বাঁচেন?
তিনি শান্তভাবে পানির উপরের আলো অনুসরণ করে ওঠার চেষ্টা করেন এবং অতিরিক্ত অক্সিজেন লাইনের সাহায্য নেন।

৬. আক্রমণে তিনি কী ধরনের আঘাত পান?
তার মুখ ও মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ডাইভিং যন্ত্রের অক্সিজেন লাইন ছিঁড়ে যায়।

৭. চিকিৎসকেরা তার অবস্থা সম্পর্কে কী বলেছিলেন?
তারা বলেন যে সংক্রমণ না হওয়া এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া ছিল আশ্চর্যজনক।

৮. হোয়োস কি আবার পানিতে নামবেন?
হ্যাঁ, তিনি পুনরায় ডাইভিং করতে যাচ্ছেন এবং কোকোস দ্বীপেই ফিরবেন।

৯. তিনি হাঙর সম্পর্কে এখন কী ভাবেন?
তার মতে, হাঙররা সমুদ্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সংরক্ষণ প্রয়োজন।

১০. আক্রমণকারী হাঙরের সঙ্গে কি আবার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
হ্যাঁ, কারণ আক্রমণের ঠিক আগে তিনি সেই হাঙরের শরীরে ট্যাগ লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

#SharkAttack
#MarineBiology
#GalapagosShark

শুধু হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় না, জোয়ান খেলে শরীরের অনেক সমস্যা নিবারণ হয় মুখরোচক বাদাম চিক্কি খেতে দারুন, বাড়িতেই তৈরী হবে, জানুন রেসিপি এইভাবে তেজপাতা পোড়ালে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে 5 Best Night Creams ৪ মাসের শিশু ২৪০ কোটির মালিক