চারটি ওয়েভ শো এবং দুটি সিনেমা। একেনবাবুর সম্পাদনায় অনির্বানের সাথে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফেলেছি। আজ অনির্বাণের জন্মবার্ষিকী। এই সময় আমিও কলকাতায় নেই। তবে প্রভাতে ওকে জন্মদিনের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছি। অনির্বাণের সম্বন্ধে লিখতে হলে অনেক কিছুই লিখতে হবে। তবে আমি ওর ও আমার বন্ধুত্ব সম্পর্ক নিয়ে কিছু সারাংশ বলতে চাই। অনির্বাণের সাথে প্রথম পরিচয় নিয়েই না হয় কথা আরম্ভ করি। যতদূর মনে আছে লক ডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমে। তখন অনেক সতর্কতা ছিল। আমার প্রথম ধারাবাহিক একেনের।
শুটিং করা স্টার্ট হবে। লকডাউন ছিল বলেই পদ্মকে( চিত্রনাট্যকর পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) এমন একটা কাহিনী বেছে নিতে বলেছিলাম, যার শুটিং একটি নিবাসের মধ্যেই শুটিং করে নেওয়া কার্যকর।সেই মতো ‘বর্মন বাড়ির রহস্য’ বাছাই করা হয়েছিল। সেইমতো আমরা সবাই মুর্শিদাবাদের রওনা দিলাম। মনে আছে এই ধারাবাহিকের অভিনেতাদের কোন চেহারা পরিবর্তন করা হয়নি। কারণ করোনার জন্য সেটা করা সাম্ভাব হয়নি। তাই ফোনের ভিডিও কলেই আমরা সমস্ত উদ্ভাবন করেছিলাম। হোটেলে পৌঁছে আমি অনির্বাণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। ওর ঘরের দরজায় শব্দ করে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম, দরজা খুললো কিন্তু ছোট্ট টেবিল দিয়ে আটকানো।
কারণ সকাল থেকে করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিলেন। ওটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ওর চেনা হাসি। খাটের এক কর্নারে বসে আছে। আমি ভেতরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসি। বলা যায় সামাজিক দূরত্ব মেনেই আমাদের পরিচয়। তবে সেই পরিচয় যে বন্ধুত্বে পরিণত হবে, সেই বিষয়ে আমার কোন ধারনা ছিলনা। হোটেলে শুধু আমদের দল ছিল। ৯ দিনের মধ্যে দুদিন লকডাউন হয়ে গেল। সেই সময় আমরা সবাই মিলে একটা ঘরে গল্প গুজব করতাম। একসাথে খাওয়া দাওয়া গান-বাজনা করতাম।
অনির্বাণকে দেখতাম, ও যেন আবরণ ছেড়ে বেরিয়ে এল। আমিও আনন্দ করেই শুটিং করতে ভালবাসি, অনির্বাণ ও বেশ আনন্দের মানুষ। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই দুজনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। অনির্বাণ এর জন্মদিনের একটি আনন্দের বিষয় জানাই। গোধূলির পর শুটিংয়ে শুটিংয়ে ওর খুব পছন্দ হতো না। সারাদিন ক্লান্ত পর বাড়ি ফিরতে চাইতো। ইউনিট বুঝে যেত, গোধূলি হলে সেই সময় অনির্বাণ যা ইচ্ছে করে ফেলত। তাই আমরা সবাই আনন্দ করে তাকে ‘মঞ্জুলিকা’ বলতাম। তবে এখন তার আগের থেকে অনেক সময় বেড়েছে। কারণ ও বুঝতে পারছে, সব সময় শুটিং করা সম্ভব না। তাই এখন অনির্বাণ রাতেও শুটিং করা মেনে নিয়েছে। মনে আছে আমাদের দুজনের মধ্যে একবার মনোমালিন্য হয়েছিল।
‘রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে আমরা তখন জয়সলমেরে। সারাদিনই শুটিং হয়েছে। তারপর রাতেও কিছু শুটিং হবে। একটু দৌড়াদৌড়ি শুটিং। আমি অনির্বাণকে দর্শনীয় বুঝিয়ে দিলাম। অনির্বাণ তখন বলে যে সে আর মহড়া করবে না। অনির্বাণ সরাসরি শুটিং করবে। আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে ও পরিশ্রান্ত। আর মহড়া দিতে পারছে না। আমি তখন সবকিছু গুছিয়ে নেই। আমাদের দুজনেরই একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। পরের দিন দুজনেই ফ্লোরে এসে ভুল বুঝতে পারি। তারপর একে অপরকে আলিঙ্গন করি। সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমি আর অনির্বাণ জন্ম দিবস উদযাপন করার বিশ্বাসই নই। তবে জুন মাসে আমার জন্মবার্ষিকীতে অনির্বাণ একটি উপঢৌকন পাঠিয়েছিল। এখন আমি পুরীতে আজ ওর জন্মদিন। পুরি থেকেই ওর জন্য একটি উপঢৌকন নিয়ে যাবো।
আরও পড়ুন,
*এবারের ‘শিক্ষারত্ন’ বীরপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ব্রত ভট্টাচার্য