দিল্লির রেড ফোর্টের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনার পর আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। হরিয়ানার ফরিদাবাদে অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভুয়ো স্বীকৃতি, জাল সার্টিফিকেশন ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছে প্রয়োগকারী সংস্থা ইডি (Enforcement Directorate)। সংস্থার দাবি, দীর্ঘ দশকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা আল-ফালাহ ট্রাস্ট ভুয়ো স্বীকৃতি দেখিয়ে মোট প্রায় ₹৪১৫.১০ কোটি টাকা আয় করেছে।
ভুয়ো মান্যতা দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন
ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা NAAC অ্যাক্রেডিটেশন এবং জাল UGC 12(B) স্বীকৃতি দাবি করে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করেছে। এই মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের ফি ও অনুদান।
আয়কর রিটার্ন বিশ্লেষণে দেখা গেছে—
২০১৪-১৫: ₹৩০.৮৯ কোটি
২০১৫-১৬: ₹২৯.৪৮ কোটি
২০১৮-১৯: ₹২৪.২১ কোটি
২০১৯-২০: ₹৪১.৯৭ কোটি
২০২০-২১: ₹৫৫.৪৯ কোটি
২০২১-২২: ₹৫৫.১৫ কোটি
২০২২-২৩: ₹৮৯.২৮ কোটি
২০২৩-২৪: ₹৬৮.৮৭ কোটি
২০২৪-২৫: ₹৮০.১০ কোটি
ইডির অভিযোগ, এগুলোর বড় অংশই এসেছে প্রতারণামূলক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে।
চেয়ারম্যান জওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি গ্রেপ্তার
মঙ্গলবার গভীর রাতে আল-ফালাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান জওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকি–কে গ্রেপ্তার করে ইডি। PMLA আইনে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় তাঁরই পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল।
ইডির দাবি, সিদ্দিকি এখনও ট্রাস্টের উপর প্রভাবশালী এবং তদন্তে বাধা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে—যেমন নথি গোপন করা, সম্পত্তি বিক্রি বা মালিকানা বদল।
ফান্ড ঘোরানো ও বেনামি সম্পত্তির অভিযোগ
ইডির আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, ডোনেশন ও তহবিল সংগৃহীত অর্থ বিভিন্ন বেনামি উৎসে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিতে কোটি কোটি টাকা ঘোরানো হয়েছে।
তদন্তে বাধা এড়াতে নথি সরানো বা সম্পত্তি লোপাটের আশঙ্কাও রয়েছে।
এ পর্যন্ত ইডি ১৯টি স্থানে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে—
প্রায় ₹৪৮ লক্ষ নগদ টাকা
গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ডিভাইস
ভুয়ো স্বীকৃতির নথি ও আর্থিক রেকর্ড
ভুয়ো NAAC ও UGC স্বীকৃতির বিরুদ্ধে এফআইআর
১৩ নভেম্বর দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করে। অভিযোগে উল্লেখ—
জাল NAAC অ্যাক্রেডিটেশন দাবি
UGC 12(B) স্বীকৃতি পাওয়ার মিথ্যা প্রচার
ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত করে অবৈধ আর্থিক লাভ
তদন্তে আরও জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর থেকেই আর্থিক অনিয়ম দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রেড ফোর্ট বিস্ফোরণ মামলায় শিক্ষকদের যোগসূত্র!
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য—দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন গাড়ি বিস্ফোরণে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ড. উমর উন নবী এবং ড. মুজাম্মিল শাকিল–কে ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি।
আরও পড়ুন
সোনার দাম ফের উর্ধ্বমুখী, দেশের প্রধান শহরগুলিতে কত বেড়েছে দেখুন
অর্থ তছরুপ থেকে শুরু করে সন্ত্রাস–যোগসূত্র—বহু দিক থেকেই এখন নজরে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়। ইডির মতে, এখনও পর্যন্ত যে আর্থিক অনিয়ম সামনে এসেছে, তা পুরো কেলেঙ্কারির একটি ছোট অংশ মাত্র। আগামী দিনে আরও বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
