সিনেমায় আমরা অনেক সময় এমন গল্প দেখি যেখানে মজা করে দেখানো হয় একটি লোকের একাধিক বিয়ে এবং তিনি সবকটি সম্পর্কে কাউকে কিছু না জানিয়ে দারুণ দিন কাটাচ্ছেন।বলিউডে এমনই একটি সিনেমা রয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তির তিনটি বিয়ে এবং তিন স্ত্রীকে নিয়ে তিনি একই ফ্ল্যাটে থাকেন। এই সিনেমার নাম ‘কিস কিস কো প্যায়ার করু’। এবার এই গল্প যেনো বাস্তবের মাটিতে ঘটতে দেখা গেলো।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর-পূর্ব চিনের জিলিন প্রদেশে। সেখানকার বাসিন্দা শিয়াওজুন এমন একাধিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন। ছোটোবেলা থেকেই তিনি অর্থাভাবে বড় হয়েছেন৷ তাই তার ছোটো থেকে ইচ্ছে ছিল বিলাসবহুল জীবনযাপন করার৷ তার বাবা ছোটোখাটো চাকরি করতেন ও মা একটি কাজ করতেন। কিন্তু তাদের বেতন ছিল খুবই সামান্য।
সেই টাকায় ভালো করে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠতো। টাকার অভাবে কলেজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি শিয়াওজুন। এই অর্থাভাব তার মনে এক বুদ্ধির উদয় ঘটায়। বিলাসবহুল জীবন চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু তার জন্য কোনোরকম চাকরি খোঁজার চেষ্টা তিনি করেননি। বরং উপার্জন করার জন্য এক অন্য পন্থা বেছে নিয়েছিলেন তিনি। প্রেমের মিথ্যা জালে জড়িয়ে তরুণীদের থেকে টাকা আদায় করতেন।
শিয়াওজিয়া নামে এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয় শিয়াওজুনের। ওই তরুণীকে শিয়াওজুন জানান তাদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। মাঝেমধ্যে শিয়াওজিয়াকে দামি দামি উপহার দিতেন শিয়াওজুন। কিন্তু সেগুলি ছিল নকল উপহার। এমন করে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সম্পর্কে থাকাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন শিয়াওজিয়া। এরপর তারা বিয়ে করে ফেলেন।
এদিকে বিয়ের পর শিয়াওজুনের আর্থিক পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন ওই তরুণী। তবে বিচ্ছেদের পথে না গিয়ে শিয়াওজুনকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এদিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণ। হং নামে এক তরুণীর সঙ্গে অনলাইন গেমিং-এর মাধ্যমে আলাপ হয় তার। এদিকে শিয়াওজুনের সঙ্গে সম্পর্কে আসার কয়েক মাসের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন হং।
ওই তরুণ জানান, ভবিষ্যতে তারা যে বাড়িতে থাকবেন সেই বাড়ি মেরামত করতে হবে তাই টাকার প্রয়োজন। এভাবে ওই তরুণীর থেকে ১৬ লক্ষ টাকা ধার নেন তিনি৷ আগে বিয়ে করা স্ত্রী শিয়াওজিয়া যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেখানেই নতুন প্রেমিকাকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন শিয়াওজুন। এভাবেই মিন, শিন, শিয়াওলান সহ একাধিক তরুণীকে মিথ্যা প্রেমের জালে ফাঁসান ওই তরুণ। এর পাশাপাশি তাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধার নেন।
এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শিন নামের ওই তরুণীর টিউশনের টাকা জমা দেওয়ার জন্য টাকার দরকার হওয়ায় তিনি শিয়াওজুনের কাছে ধারের টাকা ফেরত চান। এদিকে শিয়াওজুন একটি গাড়ি ভাড়া করে সেই গাড়িতে চেপে দেখা করতে যান এবং শিনকে কালো রঙের একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ দেন এবং বলেন তিনি যেনো এটি না খোলেন ও এতে ১২ লক্ষ টাকা আছে। শিন তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেন ও বাড়ি রেখে দেন তিনি৷ তার এক মাস পর খুলে দেখেন সমস্ত টাকা জাল।
শিয়াওজুনকে ফোন করলে তিনি ফোন তোলেননি। এরপরই তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তদন্ত করতে নামে ও শিয়াওজুনের কুকীর্তির কথা প্রকাশ্যে চলে আসে। তদন্তের পর সাড়ে ৯ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নানা ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ করে শিয়াওজুন ৩৩ লক্ষ টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন। তা ওই তরুণীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবপ বলেও জানানো হয়েছে।