ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) নিয়ে রাজ্যের জেলাশাসকদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) দফতর। এনুমারেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অতিরিক্ত সাত দিনের সুযোগ পেলেও সেই সময় কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা পরিষ্কার নির্দেশনায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রবিবারই নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে এনুমারেশনের সময়সীমা সাত দিন বাড়িয়েছে। আগে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত এনুমারেশন ফর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার কথা ছিল। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী আপলোডের শেষ দিন ১১ ডিসেম্বর। অর্থাৎ বিএলও (Booth Level Officer) এবং ইআরও-রা (Electoral Registration Officer) আরও এক সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় পাচ্ছেন।
২ ডিসেম্বরের ডেডলাইন কঠোরভাবে বলবৎ
নির্দেশ অনুযায়ী, বুথ স্তরের আধিকারিকদের কাছে থাকা সমস্ত এনুমারেশন ফর্ম ২ ডিসেম্বরের মধ্যে আপলোড করতেই হবে। ২ তারিখের পরে জমা পড়া ফর্মগুলিও সেদিনই আপলোড করতে হবে। ২ ডিসেম্বরের পর জমা রাখা কোনও ফর্ম আর গ্রহণ করা হবে না।
১১ ডিসেম্বরের পর যদি কোনও ফর্ম জমা পড়ে, তা হলে অ্যাপে সেই ফর্মকে ‘Uncollectable’ বা অসংগ্রহযোগ্য হিসেবে দেখাতে হবে।
অতিরিক্ত সময় মানেই বাড়তি দায়িত্ব
নতুন নির্দেশনায় সিইও দফতর স্পষ্ট করেছে— অতিরিক্ত সাত দিনের সুযোগ থেকে ‘সর্বাধিক নির্ভুল’ ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। তাই প্রতিটি তথ্য পুনরায় যাচাই করা বাধ্যতামূলক। নির্দেশ অনুযায়ী—
* বিএলও অ্যাপে করা প্রতিটি এন্ট্রি হার্ডকপি ফর্মের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
* কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি দ্বারা পূরণ করা ফর্ম হলে তা আরও সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে।
* ভুল বা অসাবধানতার জন্য সংশ্লিষ্ট বিএলও-র বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যে ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষ যাচাই বাধ্যতামূলক
সিইও দফতর বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর যাচাইয়ের তালিকাও দিয়েছে—
১. পরিবারের প্রধান সংক্রান্ত দাবি
যে সব ভোটার দাবি করেছেন তাঁরা পরিবারের প্রধান—
২০০২ সালে তাঁদের বয়স ৬০ বা তার বেশি ছিল কি না, তা যাচাই করতে হবে।
২. ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে মিল
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় শুধু বাবা-মায়ের নাম থাকা সত্ত্বেও ২০২৫ সালে যাঁদের বয়স ৫০ বছর বা বেশি—
তাঁদের জিজ্ঞেস করতে হবে, কেন ২০০২ সালে তাঁদের নাম ছিল না।
আরও পড়ুন
ভুল এন্ট্রি সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন, বাড়ল SIR-এর সময়সীমা
৩. বাবা-মা–সন্তান ম্যাপিং
বিএলও–র ম্যাপ করা বাবা-মায়ের নাম ২০২৫ তালিকার সঙ্গে না মিললে বাড়ি গিয়ে বা ফোন করে নিশ্চিত করতে হবে।
বাবা-মা–সন্তানের বয়সের ফারাক ৪৫ বছরের বেশি বা ১৮ বছরের কম হলে তা বিশেষভাবে যাচাই করতে হবে।
৪. অনুপস্থিত সদস্যের হয়ে সই
পরিবারের অনুপস্থিত সদস্যের হয়ে কেউ সই করলে—
বাড়ি গিয়ে, ফোনে বা অন্য মাধ্যমে সেই ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া নিশ্চিত করতে হবে তিনি অন্য রাজ্য বা জেলার ভোটার নন।
৫. ভুল এন্ট্রি সংশোধন
বিএলও-দের অ্যাপে যদি কোনও ভুল এন্ট্রি থাকে, তা সংশোধন করা যাবে।
ইআরও বা এআরও-রা এই কাজের ক্ষেত্রে বিএলওদের উৎসাহ দেবেন।
৬. স্পর্শকাতর বুথে বিশেষ নজর
২০২১ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত বুথগুলির তথ্য খুঁটিয়ে যাচাই করতে হবে।
যে সব বুথে বাবা-মা-সন্তান ম্যাপিং ৫০% বা তার বেশি, সেগুলিতেও বাড়তি সতর্কতা।
৭. মৃত ভোটারদের নাম বর্জন
জন্ম-মৃত্যু দফতর কিংবা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছ থেকে মৃতদের তথ্য সংগ্রহ করে—
ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে হবে।
বিএলও-র ভুল এন্ট্রি থাকলে সংশোধন জরুরি।
৮. ‘Uncollectable’ ফর্ম শূন্য–২০ হলে
যে বুথে শূন্য থেকে ২০টি ‘Uncollectable Form’ রয়েছে (অর্থাৎ প্রায় সব ফর্ম জমা পড়েছে)—
সেখানে বিএলও সঠিক এন্ট্রি করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
ভিডিয়ো কনফারেন্সে পর্যালোচনা বৈঠক
চলতি সপ্তাহেই এনুমারেশন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক ডাকবে সিইও দফতর। সেখানে জেলার অগ্রগতি, ত্রুটি ও সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি যত এগোচ্ছে, ততই নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির উপর জোর দিচ্ছে কমিশন। ফলে এই বাড়তি সময় প্রশাসনিক দফতরগুলোর জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনই সুযোগও বটে।
আরও পড়ুন
SIR নিয়ে মাঠে কেন্দ্রীয় বিজেপি, সাত সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন