সমাজমাধ্যমে বা বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় মদ্যপান নিয়ে আলোচনা উঠলেই দেখা যায়, অনেকেই খোলা মনে স্বীকার করে নেন—তাঁরা খালিপেটে মদ্যপান করেন। কেউ বেড়াতে গিয়ে সকাল সকাল পানীয় খোলার মেজাজ সামলাতে পারেন না, কেউ আবার মনে করেন অল্প মদেই নেশা চড়লে খরচ বাঁচে। কিন্তু এই অভ্যাস যে শরীরের ভিতরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, সে কথা মনে রাখেন কত জন?
দিল্লির গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন সার্জন ভূষণ ভোলের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, খালিপেটে মদ্যপান শরীরের জন্য বিপজ্জনক। একটি ভিডিও বার্তায় তিনি ব্যাখ্যা করেছেন—এই অভ্যাস কীভাবে মস্তিষ্ক, লিভার এবং পুরো স্নায়ুতন্ত্রে ধাক্কা দেয়।
মস্তিষ্কে সরাসরি আঘাত
ভূষণ ভোলে জানান, খাওয়ার পর শরীরে খাবারের উপস্থিতি অ্যালকোহলের শোষণ ধীর করে। কিন্তু খালিপেটে মদ্যপান করলে অ্যালকোহল প্রায় সরাসরি রক্তে মেশে। ফলে—
* রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়
* দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে প্রভাব ফেলতে শুরু করে
* শরীরের ভারসাম্য, স্নায়ুর কার্যক্ষমতা, চিন্তাশক্তি মারাত্মকভাবে কমে যায়
তার কথায়, “মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা কিছু সময়ের জন্য প্রায় অচল হয়ে যায়।”
লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ
খালি পেটে মদ্যপানের দ্বিতীয় বড় ক্ষতি লিভারে। অ্যালকোহল দ্রুত রক্তে মেশার ফলে লিভারকে দ্রুত এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কাজ করতে হয়। এর ফলে—
* লিভারের কোষ নষ্ট হতে পারে
* নিয়মিত হলে বেড়ে যায় লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি
* দেখা দিতে পারে লিভার ফেইলিওর পর্যন্ত
বিশেষজ্ঞ বলেন, যে কোনও বয়সে এই ঝুঁকি সমান, তাই সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।
তাৎক্ষণিক বড় বিপদের সম্ভাবনা
খালিপেটে মদ্যপান করলে শুধু ধীরে ধীরে নয়, তাৎক্ষণিকভাবেও ভয়ঙ্কর সমস্যা দেখা দিতে পারে—
* গা গুলোনো
* তীব্র বমিভাব
* ব্ল্যাকআউট
* দীর্ঘক্ষণের জন্য জ্ঞান হারানো
* অতিরিক্ত নেশাজনিত বিপজ্জনক পরিস্থিতি
একটু অসতর্কতা প্রাণ সংশয়ের কারণও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসক।
কীভাবে কমাবেন ঝুঁকি? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
১. মদ্যপানের আগে খান হালকা সুষম খাবার
মদ্যপানের অন্তত ৩০–৬০ মিনিট আগে খান—
* লিন প্রোটিন (ডিমের সাদা অংশ, মুরগির মাংস)
* ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
* অল্প পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (বাদাম, ডার্ক চকলেট, চিজ)
* এগুলি ধীরে হজম হয় এবং অ্যালকোহল দ্রুত রক্তে মেশা আটকায়।
২. মদ্যপানের সময়ও খান সামান্য স্ন্যাকস
অল্প খাবার সঙ্গে নিলে অ্যালকোহলের শোষণ কমবে। তবে—
* অতিরিক্ত তেলেভাজা
* খুব ঝাল
* ভারী খাবার
* হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।
৩. পর্যাপ্ত জল পান করুন
মদ্যপানের আগে এবং চলাকালীন নিয়মিত জল পান করলে—
শরীরে ডিহাইড্রেশন কমে
অ্যালকোহলের প্রভাব কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে
এটি মদ্যপানের পরের অস্বস্তিও কমাতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
মদ্যপান এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সামাজিকতার প্রয়োজনে যদি কেউ মদ্যপান করেনও, খালি পেটে পান করা যে মারাত্মক ঝুঁকির, তা বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে বলেছেন। সঠিক খাবার, জল এবং পরিমিতি—এই তিনটিই হতে পারে ঝুঁকি কমানোর একমাত্র উপায়।
