ভারতীয় আর্থিক বাজারে বড় পরিবর্তন আনল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, এখন থেকে সোনার পাশাপাশি রূপাও বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবেন গ্রাহকরা। সাধারণ মানুষের জরুরি আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে এই সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
জীবনের নানা পরিস্থিতিতে হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে অনেকে ব্যক্তিগত ঋণের পরিবর্তে সোনা ঋণকে বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন। এবার সেই সুযোগ আরও বিস্তৃত হল। RBI জানিয়েছে, বাড়িতে সংরক্ষিত রূপার গয়না বা মুদ্রা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার সুবিধা ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

কোন কোন প্রতিষ্ঠান দেবে রূপা ঋণ?
RBI-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, দেশের বেশিরভাগ ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই নতুন সুবিধা প্রদান করবে। এর আওতায় থাকছে—
সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক
আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক (RRB)
ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাঙ্ক
শহর ও গ্রামীণ এলাকার সমবায় ব্যাঙ্ক
নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানি (NBFC)
হাউজিং ফাইন্যান্স সংস্থাগুলি
অর্থাৎ, এক বিস্তৃত আর্থিক নেটওয়ার্কের আওতায় এই নতুন ঋণ সুবিধা সহজেই পৌঁছে যাবে সাধারণ মানুষের কাছে।

রূপা বন্ধক রাখতে কতটা সীমা?
RBI রূপা ঋণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছে—
১০ কেজির বেশি রূপার গয়না বন্ধক রাখা যাবে না
৫০০ গ্রামের বেশি রূপার মুদ্রা জমা রাখা যাবে না
ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে লোন-টু-ভ্যালু (LTV) অনুপাত অনুসারে। অর্থাৎ, বন্ধক রাখা রূপার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই ঋণের পরিমাণ ঠিক হবে।

সোনা বন্ধক রাখার সীমাও নির্ধারিত
নতুন নীতিমালায় সোনা বন্ধক রাখার ক্ষেত্রেও সীমারেখা আগেই ঠিক করেছে RBI
সর্বোচ্চ ১ কেজি সোনার গয়না
এবং ৫০ গ্রাম সোনার মুদ্রা
এই সীমার বাইরে কোনও গ্রাহক সম্পদ জমা রাখতে পারবেন না।
কেন এই নতুন পদক্ষেপ?
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে রূপার ব্যবহার, সংরক্ষণ ও মূল্যবৃদ্ধি ক্রমশ বাড়ছে। অনেক পরিবারের ঘরেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রূপা থাকে। এই সম্পদকে অর্থনৈতিক প্রবাহে যুক্ত করতেই RBI-এর এই উদ্যোগ। জরুরি প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ যাতে বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই অর্থ পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই নতুন নিয়ম প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।

সুবিধা কী কী?
জরুরি সময়ে সহজে অর্থলাভ
সোনা ঋণের বিকল্প হিসাবে নতুন সুযোগ
বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে পরিষেবা পাওয়া
স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত LTV অনুপাত
RBI-র এই পদক্ষেপের ফলে দেশের ছোট শহর, গ্রাম এবং দূরবর্তী অঞ্চলেও সহজলভ্য হবে রূপা বন্ধক ঋণ। আগামী ২০২৬ সাল থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে রূপার বাজার ও ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিচে নথি হারানো ও SIR (State Identification Register)–সংক্রান্ত বিষয় ধরে ২৫টি বাংলা FAQ দেওয়া হল, যাতে সাধারণ মানুষ যে প্রশ্নগুলো সাধারণত করেন সেগুলোই রাখা হয়েছে। শেষে ৩টি ইংরেজি হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
স্বর্ণ ঋণ নাকি সোনা বিক্রি? কোনটি বেশি লাভজনক
Silver Loan in India FAQ
১. প্রশ্ন: রূপা ঋণ (Silver Loan) কী?
উত্তর: এটি এমন একটি ঋণ যেখানে আপনি নিজের রূপার গয়না বা মুদ্রা বন্ধক রেখে ব্যাংক বা NBFC থেকে টাকা পান।
২. প্রশ্ন: এই রূপা ঋণের অনুমোদন কে দিয়েছে?
উত্তর: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে এই অনুমোদন দিয়েছে।
৩. প্রশ্ন: এই নিয়ম কার্যকর হবে কবে থেকে?
উত্তর: নতুন নিয়ম ১ এপ্রিল, ২০২৬ থেকে কার্যকর হবে।
৪. প্রশ্ন: কোন কোন ব্যাংক রূপা ঋণ দেবে?
উত্তর: সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাঙ্ক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক (RRB), সমবায় ব্যাঙ্ক, NBFC এবং হাউজিং ফাইন্যান্স কোম্পানি।
৫. প্রশ্ন: রূপা বন্ধক রাখার সর্বোচ্চ সীমা কত?
উত্তর: সর্বাধিক ১০ কেজি রূপার গয়না এবং ৫০০ গ্রাম রূপার মুদ্রা বন্ধক রাখা যাবে।
৬. প্রশ্ন: ঋণের পরিমাণ কীভাবে নির্ধারিত হবে?
উত্তর: ঋণ-মূল্য অনুপাত (LTV ratio) অনুযায়ী, অর্থাৎ রূপার বর্তমান বাজারমূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পর্যন্ত ঋণ মিলবে।
৭. প্রশ্ন: সোনা ও রূপা একসঙ্গে বন্ধক রাখা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, RBI-এর নতুন নিয়মে উভয় ধাতুর বিপরীতে ঋণ নেওয়া সম্ভব।
৮. প্রশ্ন: রূপা ঋণে সুদের হার কত হতে পারে?
উত্তর: এটি প্রতিটি ব্যাংক বা NBFC নির্ধারণ করবে; সাধারণত ৮%–১৫% এর মধ্যে হতে পারে।
৯. প্রশ্ন: রূপা ঋণ নেওয়ার জন্য ক্রেডিট স্কোর প্রয়োজন হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো ক্রেডিট স্কোর ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ায়।
১০. প্রশ্ন: এই ঋণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য?
উত্তর: না, ব্যবসা, কৃষি, বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে—সবক্ষেত্রেই নেওয়া যাবে।
১১. প্রশ্ন: ঋণ ফেরত দেওয়ার সময়সীমা কতদিনের হতে পারে?
উত্তর: সাধারণত ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত, প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন।
১২. প্রশ্ন: রূপার মান কিভাবে নির্ধারিত হবে?
উত্তর: অনুমোদিত জুয়েলার বা পরীক্ষিত ল্যাব দ্বারা বিশুদ্ধতা (purity) যাচাই করে।
১৩. প্রশ্ন: রূপা ঋণ নেওয়ার জন্য ন্যূনতম পরিমাণ কত?
উত্তর: কিছু ব্যাংকে ন্যূনতম ₹১০,০০০ থেকে শুরু করা যায়।
১৪. প্রশ্ন: ঋণ না ফেরালে কী হবে?
উত্তর: নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যাংক রূপা বিক্রি করে টাকা পুনরুদ্ধার করতে পারে।
১৫. প্রশ্ন: রূপা ঋণে প্রসেসিং ফি লাগবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত ঋণের পরিমাণের ০.৫%–১% পর্যন্ত ফি দিতে হয়।
১৬. প্রশ্ন: অনলাইন আবেদন করা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক ব্যাংক ও NBFC অনলাইন আবেদন গ্রহণ করে।
১৭. প্রশ্ন: রূপা ঋণ নিতে কাগজপত্র কী লাগবে?
উত্তর: আধার, প্যান, ঠিকানার প্রমাণ, এবং আয় সংক্রান্ত নথি (যদি চাওয়া হয়)।
১৮. প্রশ্ন: গৃহিণী বা ছাত্রছাত্রী রূপা ঋণ নিতে পারবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, রূপার মালিকানা থাকলে তারা যোগ্য।
১৯. প্রশ্ন: রূপা কোথায় সংরক্ষণ করা হবে?
উত্তর: ব্যাংক বা NBFC নিরাপদ ভল্টে তা রাখবে যতদিন ঋণ বাকি থাকবে।
২০. প্রশ্ন: ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করলে চার্জ লাগবে কি?
উত্তর: কিছু ব্যাংক প্রিপেমেন্ট চার্জ নেয়, কিছু নেয় না।
২১. প্রশ্ন: রূপা ঋণে ইনস্যুরেন্স সুবিধা থাকে কি?
উত্তর: অনেক প্রতিষ্ঠান রূপা সুরক্ষার জন্য ইনস্যুরেন্স অফার করে।
২২. প্রশ্ন: রূপা ঋণ নেওয়ার কর সুবিধা আছে কি?
উত্তর: সাধারণত কর ছাড় পাওয়া যায় না, তবে ব্যবসায়িক ঋণ হলে কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব।
২৩. প্রশ্ন: রূপা ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: রূপা ঋণ নিরাপত্তার (secured) ভিত্তিতে দেওয়া হয়, ব্যক্তিগত ঋণ নয়।
২৪. প্রশ্ন: সোনা ঋণ ও রূপা ঋণে কি নিয়ম এক?
উত্তর: অনেকাংশে মিল আছে, তবে রূপার ক্ষেত্রে সীমা ও মূল্যায়ন আলাদা।
২৫. প্রশ্ন: ভবিষ্যতে রূপা ঋণের জনপ্রিয়তা বাড়বে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, RBI-এর পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের কাছে রূপা ঋণকে আরও সহজলভ্য করবে।
#SilverLoan #RBIUpdate #IndiaFinance

