জন্মছক, রাশি ও গ্রহের পাশাপাশি নক্ষত্রও মানুষের স্বভাব ও প্রবৃত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে—এ কথা বহু প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। জন্মের মুহূর্তে যে নক্ষত্রে চন্দ্র অবস্থান করে, তার উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় ব্যক্তির চরিত্র, মানসিক গঠন এবং কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্যের গতিপথ। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে বহু প্রাচীন গ্রন্থে কিছু নক্ষত্রকে বিশেষভাবে ‘লক্ষ্মীমন্ত’ বা শুভ লক্ষণের প্রতীক বলে বিবেচনা করা হয়। সেগুলির মধ্যেই অন্যতম তিনটি নক্ষত্র—পুষ্যা, অনুরাধা ও উত্তর ভাদ্রপদ। এই নক্ষত্রের অধীনে জন্মানো নারীদের স্বভাবের মধ্যে দেখা যায় অতুলনীয় সৌন্দর্য, সৌম্যতা, পরিশ্রম, বিনয় ও সহানুভূতিশীল মনোভাব।
পুষ্যা নক্ষত্র: শান্ত, নম্র ও পরোপকারী
জ্যোতিষ মতে পুষ্যা নক্ষত্রকে অত্যন্ত শুভ নক্ষত্র হিসেবে ধরা হয়। এই নক্ষত্রে জন্মানো মেয়েরা স্বভাবতই অত্যন্ত নম্র, শান্ত ও ভদ্র চরিত্রের হন। যেকোনও কাজের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা অসাধারণ। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তাঁদের বিশেষ পরিচয়।
পুষ্যা নক্ষত্রের জাতিকারা পরিশ্রমকে কখনও ভয় পান না, বরং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন। অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে উল্টো মানুষের ভালোর খবর শুনে আনন্দিত হন, প্রয়োজনে ছুটে যান সাহায্যে। এই মানবিক গুণই তাঁদের বন্ধুমহলে অত্যন্ত প্রিয় করে তোলে।
অনুরাধা নক্ষত্র: সাহস, সাফল্য ও সম্পর্ক রক্ষার ক্ষমতা
অনুরাধা নক্ষত্রকে বলা হয় সফলতার প্রতীক। এই নক্ষত্রের অধীনে জন্মানো নারীরা অসাধারণ সাহসী হন। জীবনের প্রতিকূলতা তাঁদের থামাতে পারে না; বরং চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়াই তাঁদের চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
ঝুঁকি নিতে এঁরা পিছপা নন—সাফল্যের জন্য প্রয়োজন হলে নতুন পথ বেছে নিতেও রাজি। অনুরাধা নক্ষত্রের মেয়েরা সম্পর্ককে অত্যন্ত যত্নে ধারণ করেন। বন্ধুবান্ধব, পরিবারের মানুষের খোঁজখবর রাখা, তাঁদের প্রয়োজনের সময়ে পাশে দাঁড়ানো—এসব তাঁদের স্বভাবগত। ফলে তাঁরা সহজেই মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নেন।
উত্তর ভাদ্রপদ নক্ষত্র: সংবেদনশীলতা, আধ্যাত্মিকতা ও দৃঢ় মানসিকতা
উত্তর ভাদ্রপদ নক্ষত্রে জন্মানো নারীদের মানসিক শক্তি অসাধারণ। যে কোনও পরিস্থিতিতে লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁদের সহজাত। সংবেদনশীল মন তাঁদের করে তোলে মানুষের দুঃখ-বেদনা বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। অপরের কষ্ট তাঁরা অনুভব করতে পারেন এবং যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেন।
এঁদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধারণত অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। তবে মাঝে মাঝে রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর প্রবণতা দেখা গেলেও তা খুবই সামান্য। অধিকাংশ সময় তাঁরা নিজের জগতে শান্তভাবে থাকতেই ভালোবাসেন।
আরও পড়ুন
হাতে কোন রঙের সুতো শুভ?—ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপকারিতার বিশদ প্রতিবেদন
উপসংহার
জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিতে পুষ্যা, অনুরাধা ও উত্তর ভাদ্রপদ নক্ষত্রের জাতিকারা সৌন্দর্য ও সদগুণের অনন্য সমাবেশ। পরিশ্রম, সৌম্যতা, সাহস, সংবেদনশীলতা ও আধ্যাত্মিকতার এই মিলিত রূপই তাঁদের করে তোলে সত্যিকারের ‘লক্ষ্মীমন্ত’। ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে তাঁরা সহজেই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন—এটাই এই তিন নক্ষত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
আরও পড়ুন
শীতের শুষ্কতায় হাতের ত্বকে ছাল ওঠা? সুরক্ষায় মানুন সঠিক যত্ন