জীতু কমল ও দিতিপ্রিয়া রায়ের সাম্প্রতিক কলহ এখন টলিউডের চায়ের টেবিল থেকে সামাজিক মাধ্যমে— সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এই ঘটনাকে নিছক ব্যক্তিগত বিরোধ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। শিল্পী, পরিচালক, কাহিনিকার— সকলের মতে, এটি আসলে পেশাদার দুনিয়ার সেই অদেখা দিক, যেখানে প্রতিমুহূর্তে তীব্র প্রতিযোগিতা, চাপ, এবং নিজেদের প্রমাণ করার লড়াই।
বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতি ও ‘গ্ল্যামার’-এর কারণে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে এলেই তা খবর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ প্রযুক্তিনির্ভর বা অন্য কোনও পেশায় প্রতিযোগিতা বা কলহের ঘটনা যতই ঘটে, তা কখনওই এমন আলোড়ন তোলে না। কিন্তু টেলিপাড়ায় পরিস্থিতি একটু বদলালেই আলোচনার ঝড় ওঠে, যা ঘটেছে জীতু-দিতিপ্রিয়ার ক্ষেত্রেও।
ধারাবাহিক বন্ধের আশঙ্কা?
টেলিপাড়ার ভেতরে কানাঘুষো— চলমান এই বিরোধের জেরে নাকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে ধারাবাহিকটি। প্রযোজনা সংস্থার নাকি ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে, কারণ একই ধরনের সমস্যা নাকি বারবার ঘটছে সেটে।
এই পরিস্থিতিতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে টলিউডের বেশ কয়েকজন নামী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। শিল্পীরা জানালেন— এমন ঘটনা নতুন নয়। আবার, মিটমাটও হয়ে যায়। তাই তাঁদের প্রত্যাশা, এবারও সমস্যার সমাধান মিলবে।
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়: “কলহের ছাপ কাজে পড়ছে”
কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, প্রকৃত ঘটনা তিনি জানেন না। যা শুনেছেন, তা সমাজমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে।
তিনি মনে করেন,
> “যে কোনও পেশাতেই কলহ কাজের উপর প্রভাব ফেলে। এখানে সেটাই হচ্ছে। ধারাবাহিকের শুটিংয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, দায়িত্বে থাকা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও প্রযোজকদের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করা। প্রয়োজনে আলোচনা করেও সমস্যা মেটানো যায়।
স্বস্তিকা দত্ত: “ধারাবাহিক বন্ধ মানে বহু মানুষের রুজি বন্ধ”
আট বছর পর ‘বিদ্যা ব্যানার্জি’ দিয়ে ছোটপর্দায় ফিরেছেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত। তাঁর মতে, ধারাবাহিক কেবল নায়ক-নায়িকা বা পরিচালকের উপর দাঁড়ায় না—
বহু টেকনিশিয়ান, শিল্পী এবং কর্মী নিয়মিত কাজ পান এই মাধ্যমে।
> “ধারাবাহিক বন্ধ মানে সবার রুজি-রুটি বন্ধ হয়ে যাওয়া।”
তাই তাঁর অনুরোধ, আলোচনা-সমঝোতার পথেই সমাধান খুঁজে নেওয়া উচিত।
পরিচালক অমিত দাস: “সমাজমাধ্যম টেলিপাড়াকে কালিমালিপ্ত করছে”
‘গৃহপ্রবেশ’-এর পরিচালক অমিত দাসের অভিযোগ— সমাজমাধ্যম সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
> “ঘরের ঘটনা বাইরে চলে আসছে। এতে শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।”
তার মতে, ছোটপর্দায় তেমন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য হয় না। এতটুকুতেও সমস্যা তৈরি হলে তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
ইন্দ্রজিৎ বসু: “বয়সের পার্থক্যে কোনও সমস্যা হয় না”
‘আজকের পরশুরাম’-এর নায়ক ইন্দ্রজিৎ বসুর মত, বয়সের পার্থক্যই মতবিরোধের কারণ— এই ধারণা ভুল।
তিনি উদাহরণ দেন নিজের অভিজ্ঞতার—
> “‘ধ্রুবতারা’য় বয়সের ফারাক ছিল, তবু কোনও সমস্যা হয়নি।”
তার মতে, বেশি সময় একসঙ্গে কাটালে খানিক মতান্তর হতেই পারে— যেমন বাসন-কোসনে ঠোকাঠুকি লাগে।
হেমা মুন্সি: “দিতিপ্রিয়াকে ছোটবেলা থেকে চিনি, দেখে খারাপ লাগছে”
দিতিপ্রিয়ার কেশসজ্জাশিল্পী হেমা মুন্সি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, তিনি দিতিপ্রিয়াকে মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে দেখছেন।
> “খুব লক্ষ্মী মেয়ে। পরিবারও অত্যন্ত ঘরোয়া। কোনও অহঙ্কার নেই।”
প্রতিদিন সমাজমাধ্যম খুললেই সমস্যা সংক্রান্ত পোস্ট দেখে তাঁর মন খারাপ হয়।
টলিউড ছোট একটা পরিবার— সেখানে সবাই মিলেমিশে কাজ করুক, এটাই তাঁর প্রত্যাশা।
উপসংহার
জীতু-দিতিপ্রিয়ার চলমান বিতর্ক কেবল এক ধারাবাহিকের সমস্যা নয়— এটি গোটা শিল্পের অন্দরমহলের প্রতিযোগিতা, চাপ ও সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রতিফলন।
টলিউডের অধিকাংশই বিশ্বাস করেন— আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
শেষ পর্যন্ত শিল্পটিই বড়— আর তা টিকিয়ে রাখতে চাই শান্তিপূর্ণ কাজের পরিবেশ।
