দেশজুড়ে রেলের নয়া রুট চালুর তালিকা খতিয়ে দেখলে স্পষ্ট এক প্রবণতা চোখে পড়ছে—বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের দ্রুত বিস্তার আর তার পাশাপাশি রাজধানী ও শতাব্দী এক্সপ্রেসের কার্যত স্থবির হয়ে পড়া। গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর—টানা দু’মাসে—মোদী সরকার গড়ে তিনটি করে বন্দে ভারত ট্রেন চালু করেছে। মে ও জুন মাসেও একই ধারা।
এর বিপরীতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, দ্রুতগামী ট্রেনগুলির তালিকায় থাকা রাজধানী এবং শতাব্দী এক্সপ্রেসের নতুন রুট চালুর হার প্রায় শূন্য।
রাজধানীর অবস্থা: ছ’বছরে মাত্র এক নতুন রুট
রেলমন্ত্রকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে—২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কোনও নতুন রুটে রাজধানী এক্সপ্রেস চালু হয়নি। ২০১৯ সালে মুম্বই সিএসএমটি–দিল্লি রুটে রাজধানী চালু হওয়ার পর দীর্ঘ ছ’বছর কোনও উদ্যোগই ছিল না।
অবশেষে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মিজোরামের সাইরং–আনন্দবিহার (দিল্লি) রুটে এক নতুন রাজধানী এক্সপ্রেস চালু হয়। ছ’বছরে মাত্র একটি রুট—যা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত।
শতাব্দীর আরও করুণ চিত্র
শতাব্দী এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও গভীর।
২০১৩ সালের পর গত ১২ বছরে সারা দেশে একটিও নতুন শতাব্দী এক্সপ্রেস চালু হয়নি।
২০১৩-তেই চালু হয়েছিল চণ্ডীগড়–নিউ দিল্লি শতাব্দী এবং হাওড়া–পুরী শতাব্দী।
হাওড়া–পুরী রুটটি মূলত ২০১০ সালে ‘দুরন্ত এক্সপ্রেস’ নামে শুরু হয়েছিল, পরে সেটিকেই শতাব্দীতে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন কোনও রুটে শতাব্দী চালুর উদ্যোগ এক দশকের বেশি সময় নেই।
তাহলে কি ‘বন্দে ভারত’-কেই প্রাধান্য দিচ্ছে কেন্দ্র?
*রেলমন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য না করলেও সরকারি মহলের দাবি, দেশে এখন বন্দে ভারত নিয়ে ‘তুমুল উন্মাদনা’।
*প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি কেন্দ্র চায় তাদের এলাকায় বন্দে ভারত থামুক—ফলে পরিষেবা বাড়ানো সরকারের কাছে অগ্রাধিকার।
*শনিবার বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসঙ্গে চারটি নতুন বন্দে ভারত রুট উদ্বোধন করেছেন—এমন উদাহরণ এই দ্রুত সম্প্রসারণের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন
স্মার্ট মিটার বিতর্ক: ভ্রান্ত ধারণা ভাঙছে সরকার
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন
কিন্তু রেল বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন—
“বন্দে ভারতকে তুলে ধরতে গিয়ে কি সরকার দেশের পুরনো, পরীক্ষিত, সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি ট্রেন পরিষেবাকে অগ্রাহ্য করছে?”
রাজধানী–শতাব্দীর দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা জনপ্রিয়তা ও পরিষেবা মান থাকলেও নতুন রুটে সম্প্রসারণ না হওয়া সাধারণ যাত্রীদের এক বড় অংশকে হতাশ করছে।
শেষ কথা
বন্দে ভারত নিঃসন্দেহে আধুনিক, দ্রুতগামী এবং প্রিমিয়াম সার্ভিস।
কিন্তু ভারতীয় রেলের ইতিহাসে রাজধানী ও শতাব্দীর অবদানও বিশাল।
এখন দেখার বিষয়—বন্দে ভারতের উচ্ছ্বাসের মাঝে পুরনো প্রিমিয়াম ট্রেনগুলিকে কেন্দ্র আবার কতটা গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনে।
