প্রাপ্তবয়স্কদের মতো খোলাখুলি নিজের উদ্বেগ বা মানসিক অস্বস্তির কথা বলা ছোটদের পক্ষে সহজ নয়। তারা খেলছে, হাসছে—দেখে মনে হতে পারে সব ঠিকই আছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভয়, অস্থিরতা ও চাপ জমা হতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত বুঝতে পারেন না এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলিকে। অথচ উদ্বেগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি শনাক্ত করা গেলে শিশুর মানসিক সুস্থতা রক্ষা করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, কথা বলা, থেরাপি—এসব বড়দের কাছে পরিচিত পথ। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে উদ্বেগ প্রকাশ ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। তাই তাদের দৈনন্দিন আচরণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা সংকেতগুলিকে চিনে নেওয়াই প্রথম কাজ।
১. চেনা পরিসর এড়িয়ে চলা
আগে যে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত খেলত, হঠাৎ করেই যদি সেই সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে শুরু করে, বুঝতে হবে বিষয়টি সাধারণ অভ্যাসবদল নয়। কোনও অস্বস্তি বা ভয় তাকে প্রভাবিত করছে। সামাজিক পরিস্থিতি এড়ানো শিশুদের উদ্বেগের অন্যতম প্রথম লক্ষণ।
২. আচরণে বাড়তি বিরক্তি ও আবেগপ্রবণতা
শিশুরা অনেক সময় ভয় বা দুশ্চিন্তা প্রকাশ না করে কান্না, রাগ বা চিৎকারের মাধ্যমে মনোভাব প্রকাশ করে। ছোট বিষয়েও অতিরিক্ত আবেগী হয়ে ওঠা বা আচমকা রেগে যাওয়া হতে পারে উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ। অভিভাবকদের এই সময়ে ধৈর্য ধরে সন্তানের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
৩. রাতে অস্থিরতা বা ঘুমের সমস্যা
রাত নামার সঙ্গে সঙ্গেই শিশুদের উদ্বেগের মাত্রা বেড়ে যায়। দুঃস্বপ্ন দেখা, ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া, অন্ধকারে ভয় পাওয়া—এসবই ভয় বা দুশ্চিন্তার ইঙ্গিত। অনেক সময় তারা ভয়টাকে ভাষায় প্রকাশও করতে পারে না।
৪. ঘন ঘন শরীর খারাপের অভিযোগ
উদ্বেগ শরীরেও প্রভাব ফেলে। নিয়মিত পেটব্যথা, মাথাব্যথা, স্কুলে যেতে অনীহা—এসব মানসিক চাপের ফল হতে পারে। শিশুদের ব্যথার অভিযোগকে অজুহাত ভেবে অবহেলা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
৫. একা থাকতে ভয় পাওয়া
মা-বাবার থেকে আলাদা হলেই যদি শিশুটি অস্থির হয়ে ওঠে বা বার বার আশ্বাস চাইতে থাকে, সেটা নিরাপত্তাহীনতার লক্ষণ। হঠাৎ করে এই ধরন বেড়ে গেলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
৬. ভুল করার প্রতি অতিরিক্ত ভয়
অনেক শিশু উদ্বেগের কারণে নিখুঁত হওয়ার প্রবণতায় ভোগে। কাজ শুরু করার আগে বারবার জিজ্ঞেস করা—‘ঠিক হচ্ছে তো?’—বা ভুল করার আতঙ্কে কাজ এড়িয়ে চলা অ্যাংজায়িটিরই ইঙ্গিত হতে পারে।
অভিভাবকদের কী করবেন?
* শিশুকে বকা নয়, বরং মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
* তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন।
* নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন যাতে সে ভয় ছাড়াই কথা বলতে পারে।
* পরিবর্তনগুলি দীর্ঘ সময় ধরে চললে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করলে পরবর্তী কালে তা আরও গভীর সমস্যার জন্ম দিতে পারে। সময়মতো সচেতনতা ও সঠিক যত্নই পারে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।
