বাপ্পি লাহিড়ীর জন্মদিনে স্মৃতিচারণ, আবেগে ভেসে উঠলেন সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

আজকের দিনটি সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে বিশেষ। কারণ আজই জন্মদিন সেই মানুষটির, যাঁর সান্নিধ্য, নির্দেশনা এবং ভালোবাসা তাঁর সংগীতজীবনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে—বাপ্পি লাহিড়ী। শুধু কিংবদন্তী শিল্পী নন, জিৎ-এর কাছে তিনি ছিলেন আপনজনের মতো একজন পথপ্রদর্শক।

শৈশব থেকেই বাপ্পি লাহিড়ীর গান শুনে বড় হয়েছেন জিৎ। নাচের তালে জমজমাট ডিস্কো থেকে শুরু করে সুরেলা, আবেগময় সঙ্গীত—বহুমাত্রিক প্রতিভার এক অনুপম সংমিশ্রণ ছিলেন বাপ্পিদা। ‘ডিস্কো ডান্সার’ থেকে ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’—একই মানুষ যে এত ভিন্ন ঘরানার অসংখ্য জনপ্রিয় গান সৃষ্টি করতে পারেন, তা আজও জিৎ-কে বিস্মিত করে।

জিৎ বলেন, তাঁর ‘মুসকুরানে কি ওয়াজা’ গানটি শুনে বাপ্পিদা তাঁকে ফোন করে প্রশংসা করেছিলেন। বিশেষ করে গানের অন্তরার অংশটি বাপ্পিদার খুব পছন্দ হয়েছিল। এই স্বীকৃতি তাঁর কাছে ছিল অনুপ্রেরণার উৎস।

‘চিরদিনই তুমি যে আমার’—গানের সঙ্গে আবেগঘন বন্ধন
বাপ্পিদার কালজয়ী সৃষ্টি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। পরে সেই একই নামের ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব যখন জিৎ পেলেন, প্রথম ফোনটিই করেছিলেন বাপ্পিদাকে। তিনি শুধু বলেছিলেন—
“তুমি শুধু মন দিয়ে কাজটা কোরো।”
শুধু এই কয়েকটি শব্দ জিৎ-এর জন্য ছিল বিরাট সাহস ও প্রেরণা।

ছবির ‘বাতাসে গুনগুন’ ও ‘ঝিরিঝিরি’ গানদু’টি বাপ্পিদার খুব পছন্দ হয়েছিল। বাপ্পিদার স্ত্রী চিত্রাণী লাহিড়ী নিজে ফোন করে তাঁর ভালো লাগার কথা জানান। জিৎ জানান, তাঁদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল পরিবারের মতো। বাপ্পিদা ও বৌদি বহুবার তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী চন্দ্রানীকে ডেকে নিয়ে গেছেন, খাইয়েছেন, গল্প করেছেন—কখনোই দাম্পত্য উষ্ণতা ও আদর-যত্নের অভাব ছিল না।

অসীম জ্ঞানের ভাণ্ডার বাপ্পিদা
শুধু সুরকার নন, তালবাদ্যে বাপ্পিদার দখল ছিল অসাধারণ। তবলা তাঁর হাতে যেন কথা বলত। তাই তাঁকে দেখে জিৎ শিখেছেন—যাঁর তালজ্ঞান গভীর, তাঁর সৃষ্টিও হয় অনন্য।

গায়ক হিসেবেও বাপ্পিদার কণ্ঠ ছিল যাদুর মতো। জিৎ বলেন, স্টুডিওতে বাপ্পিদা মাইকের সামনে দাঁড়ালেই পরিবেশ বদলে যেত। তাঁর কণ্ঠ যেন মুহূর্তেই সুরের জাদু তৈরি করত।

মানুষ বাপ্পি লাহিড়ী—আদ্যোপান্ত বাঙালি, আপন মানুষের মতো
মুম্বইয়ে থেকেও বাপ্পিদা ছিলেন পুরোপুরি বাঙালি। বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত, বইয়ের সংগ্রহ, বাঙালি খাবার—সবকিছুতেই তাঁর বাঙালিয়ানার ছাপ। মাছ ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় খাদ্য। জিৎ জানান, বাপ্পিদার কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন খাবারের প্রতি এই আবেগ।

করোনা অতিমারির পর একদিন বাপ্পিদা এসেছিলেন জিৎ-এর বাড়িতে। সেই স্মৃতি আজও আবেগ জাগায়।

অকালপ্রয়াণ—শূন্যতা আজও ভর করে
জিৎ-এর মতে, বাপ্পিদার চলে যাওয়ার বয়সই হয়নি। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, উৎসাহ ও কর্মস্পৃহা মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। তাঁর প্রয়াণে ক্ষতি হয়েছে পুরো সংগীতজগতের। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতি চিত্রাবৌদির। তিনি ছিলেন বাপ্পিদার ছায়াসঙ্গী—বাপ্পিদা কোথায় কখন থাকবেন, কী প্রয়োজন—সবকিছুতে তাঁর অক্লান্ত সঙ্গ।
প্রতি বছরের মতো এবারও জিৎ বৌদির সঙ্গে কথা বলবেন, স্মৃতিচারণ করবেন।

শেষ কথায়
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন—বাপ্পি লাহিড়ী শুধুই একজন শিল্পী নন, তিনি বাংলার ও ভারতের সংগীতভুবনের ইতিহাস। তাঁর সৃষ্টির ব্যাপ্তি, জ্ঞান, মমতা, ভালবাসা—সব মিলিয়ে তিনি এক সোনালি অধ্যায়। তাঁর আশীর্বাদে জিৎ আজও নতুন নতুন সুর তৈরি করে চলেছেন, ঠিক যেমন তাঁর পরামর্শ ছিল—
“সবসময় মন দিয়ে কাজ করো।”

আরও পড়ুন,
*Raj-Subhasree: সকাল সকাল নতুন প্রোজেক্টের কথা ঘোষণা করলেন রাজ-শুভশ্রী! দেখার আর্জি জানালেন দর্শকদের

শুধু হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় না, জোয়ান খেলে শরীরের অনেক সমস্যা নিবারণ হয় মুখরোচক বাদাম চিক্কি খেতে দারুন, বাড়িতেই তৈরী হবে, জানুন রেসিপি এইভাবে তেজপাতা পোড়ালে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে 5 Best Night Creams ৪ মাসের শিশু ২৪০ কোটির মালিক