অভাবের সংসারে বড় হওয়া পুণের ১২ বছরের এক বালিকা এবার উড়ে যাবে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েন, কুঁড়েঘরের দেয়াল ভাঙা, স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সাত কিলোমিটার হাঁটা—সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অদিতি পার্থে এবার ইতিহাস গড়তে চলেছে।
নিগুদাঘরের মেয়ের অবিশ্বাস্য কীর্তি
পুণের নিগুদাঘর জেলা পরিষদ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অদিতি পার্থে চলতি বছরে জেলা পরিষদ আয়োজিত ‘নাসা স্টুডেন্ট ভিজিট প্রোগ্রাম’-এর জন্য নির্বাচিত ২৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে জায়গা পেয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নিয়েছিল প্রায় ১৩,৬৭১ জন পড়ুয়া। তিনটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয় এই ক্ষুদে প্রতিভা।
কম্পিউটারহীন স্কুল, কিন্তু অনলাইন পরীক্ষায় সেরা
অদিতির স্কুলে কোনও কম্পিউটার না থাকায় স্কুলের প্রধানশিক্ষক অশোক বন্দল নিজের ল্যাপটপে তার অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। গণিত, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও ভূগোলের প্রশ্নে নির্ভুল উত্তর দিয়েই অদিতি বিচারকদের মুগ্ধ করে।
খবর
আপাতত মুক্তি বর্ষা থেকে, বঙ্গে শীতের আমেজ শুরু কবে থেকে? কী জানাল হাওয়া অফিস
বাড়ি থেকে স্কুল — দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয় প্রতিদিন
প্রতিদিন সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটে অদিতি। বিকেলে আবার সেই একই পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা। অভাবী পরিবারের পক্ষে বাসভাড়া জোগাড় করাও বিলাসিতা। অদিতির বাবা ও মামা পুণের বাজারে কুলির কাজ করেন।
‘আমার মা দিনে ১৫ বার ফোন করছে’
নাসা সফরের খবর জানার পর আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন অদিতি ও তার পরিবার। প্রধানশিক্ষকের ঘরে বসে সংবাদমাধ্যমকে অদিতি জানায়—
<“যখন স্যর আমার মামিকে খবরটা দিলেন, তখন মামি খুব খুশি হয়ে গিয়েছিল। আমি মা-কে সকাল ৭টায় ফোনে জানাই যে আমেরিকা যাচ্ছি। তারপর থেকে মা দিনে ১৫ বার ফোন করছে।”
স্কুল থেকে উপহার, সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ
অদিতির অসাধারণ সাফল্যের পর স্কুলের তরফে তাকে একটি সাইকেল ও ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়েছে। পরিবারের অনুরোধে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি ল্যাপটপের আবেদনও জানিয়েছে জেলা পরিষদে। ইতিমধ্যেই নাসা সফরে অংশ নেওয়া ২৫ জন পড়ুয়ার জন্য পাসপোর্ট ও গ্রুপ ভিসা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছেন যাতে দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পুরো প্রকল্পের বাজেট প্রায় ২.২ কোটি টাকা, যা বহন করবে জেলা পরিষদ ও জেলা পরিকল্পনা উন্নয়ন কমিটি।
‘কুলি হওয়া ছাড়া উপায় নেই, তাই পড়াশোনায় জোর দিই’
অদিতির মামি মঙ্গলা কাঁক বলেন—
“আমরা কোনও দিন বিমানে উঠিনি, চোখেও দেখিনি। অদিতি যে আমেরিকা যাচ্ছে, সেটা আমাদের জন্য গর্বের। আমাদের গ্রামে পড়াশোনা না করলে কুলি হওয়া ছাড়া উপায় নেই, তাই আমরা সন্তানদের পড়াশোনার দিকেই জোর দিই।”
নভেম্বরে উড়ান
নাসা সফরে পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকবেন তিনজন শিক্ষক, আইইউসিএএ-র দুই কর্মী এবং এক মেডিক্যাল অফিসার। নভেম্বরে মুম্বই থেকে উড়ে যাবে অদিতি ও তার সহপাঠীরা—বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার স্বপ্নভূমিতে।