শীতের শুরুতে দেশের বিভিন্ন বড় শহরে যেমন দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা বা বেঙ্গালুরু— সর্বত্রই বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছে যায়। দূষণের জেরে পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই মানুষের শরীরও নানা সমস্যায় ভোগে। এই সময় বহু ফিটনেসপ্রেমী সকালে হাঁটতে বা দৌড়তে বের হন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— দূষণের মাঝখানে সকালে শরীরচর্চা কতটা নিরাপদ?
সকালে বায়ুদূষণের মাত্রা কেন বেশি?
শীতের ভোরে তাপমাত্রা কমে যায় এবং বাতাসের গতি হ্রাস পায়। এর ফলে বাতাসের দূষক কণাগুলি উপরে না উঠে জমে থাকে নিচের স্তরে। বিশেষত ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে দূষণের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। ফলস্বরূপ, এই সময়ে বাইরে হাঁটা বা দৌড়নো শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দূষণের মধ্যে শরীরচর্চা কেন বিপজ্জনক?
শরীরচর্চার সময় শরীর বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন অনুভব করে এবং সেই জন্যই শ্বাস নেওয়ার হার বেড়ে যায়। বেশি গভীরভাবে ও দ্রুত শ্বাস নেওয়ার ফলে দূষিত বাতাসে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ— যেমন PM2.5, PM10, সালফার ডাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড— আরও বেশি পরিমাণে ফুসফুসে প্রবেশ করে।
ফলে যা যা ক্ষতি হতে পারে—
*শ্বাসনালিতে প্রদাহ
*অ্যালার্জি ও হাঁপানির সমস্যা বৃদ্ধি
*মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি
*দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্ষতি
*সিওপিডি (COPD)–র ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া
*হৃদরোগের সমস্যা বাড়তে পারে
অনেক চিকিৎসক এটিকে ধূমপানের সঙ্গে তুলনা করেন— কারণ দূষিত বাতাস গ্রহণ করা মানে বারবার ক্ষতিকর কণা দেহে প্রবেশ করানো।
কখন দৌড়–হাঁটা নিরাপদ?
চিকিৎসকদের মতে, বাইরে শরীরচর্চা করতে চাইলে প্রথমেই দেখে নিতে হবে Air Quality Index (AQI)।
AQI যদি ২০০-এর বেশি হয়, তাহলে বাইরে দৌড়ানো বা হাঁটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
দূষণ বেশি থাকলে জিম বা বাড়ির ভিতর শরীরচর্চা করাই নিরাপদ।
N95 বা স্পোর্টস রেসপিরেটর মাস্ক ব্যবহার করলে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যায়, তবে তীব্র ব্যায়ামে মাস্ক ব্যবহার অস্বস্তিকর হতে পারে।
সূর্য ওঠার পর একটু দেরিতে, অর্থাৎ বেলা ১০টার পরে দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে— তখন হাঁটা তুলনামূলক নিরাপদ হতে পারে।
আরও পড়ুন

দূষণ মোকাবিলায় কী কী করা উচিত?
*স্থানীয় বায়ুর মান নিয়মিত পরীক্ষা করা
*ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা
*গাছপালা লাগানো
*ব্যক্তিগত বাহনের ব্যবহার কমানো
*সকালবেলার তীব্র ব্যায়ামের বদলে যোগ বা হালকা ওয়ার্কআউট বেছে নেওয়া
শেষকথা
ফিটনেস বজায় রাখা যেমন জরুরি, তেমনই শরীরকে দূষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই বায়ুদূষণের সময় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শরীরচর্চার সময় ও পদ্ধতি বেছে নেওয়াই শ্রেয়। স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সতর্কতাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
