রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যেই দীর্ঘদিনের একটি সমস্যার সমাধানের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকায় নাম ওঠানোকে ঘিরে রূপান্তরকামীদের বহুদিনের প্রতিবন্ধকতা—পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষেরা বাবা-মায়ের পরিচয় কীভাবে দেবেন—অবশেষে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল।
পরিবারবিচ্ছিন্ন রূপান্তরকামীদের দাবি
অনেক রূপান্তরকামী বছরের পর বছর ধরে মূল পরিবার থেকে আলাদা। তাঁদের অনেকেরই বাবা-মা জীবিত থাকলেও সামাজিক চাপ, মানসিক দূরত্ব, বা আত্মপরিচয়ের কারণে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন। ফলে ২০০২ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নতুন করে নাম তুলতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল পরিচয়ের প্রশ্ন।
এই সমস্যার কথা জানিয়ে সোমবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে হাজির হয় রাজ্যের বেশ কয়েকটি রূপান্তরকামী সংগঠন। তাঁরা সরাসরি দাবি তোলেন—
“পরিবারবিচ্ছিন্ন রূপান্তরকামীরা যেন ‘গুরু মা’-র নামকে অভিভাবক পরিচয়ের জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন।”
এই দাবিই তুলে ধরা হয় জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে।
কমিশনের আশ্বাস ও নতুন নিয়ম
সিইও দফতর দ্রুত সাড়া দেয়। জানানো হয়—কেউ যেন কোনও রকম হেনস্থার সম্মুখীন না হন, তার জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হবে। শুধু আশ্বাস নয়, পরদিনই সমস্ত জেলা শাসকের কাছে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা।
নির্দেশিকার মূল পয়েন্ট—
রূপান্তরকামী ভোটাররা বাবা-মায়ের বদলে ‘গুরু মা’-র নাম ও তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁদের প্রতি কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ, প্রশ্নাতীত যাচাই বা অপমানজনক ব্যবহারের ঘটনা না ঘটে।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রূপান্তরকামী সংগঠনের সদস্যরা। তাঁদের কথায়, “প্রথমবার আমাদের পরিচয় ও বাস্তবতাকে সরকারি নথিতে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।”
আরও পড়ুন
SIR ফর্মে ভুল হলে কী করবেন? জানাল নির্বাচন কমিশন—ভোটারদের বিভ্রান্তি দূর করল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা
ভুয়ো ভোটার রুখতে আসছে এআই-চালিত স্ক্যানিং
নাম অন্তর্ভুক্তির সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি ভুয়ো ভোটারদের ধরতেও কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকার সংশোধন চলাকালীনই সন্দেহজনক ছবি বা ভুয়ো পরিচয় রুখতে ব্যবহৃত হবে বিশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
আরও পড়ুন
Viral Video: SIR আতঙ্কে সীমান্তে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়, তুমুল রাজনৈতিক তরজা
কীভাবে কাজ করবে নতুন প্রযুক্তি?
কমিশনের একটি নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে স্ক্যান করা হবে ভোটারদের ছবি।
এআই সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করবে ছবিটি আসল নাকি ভুয়ো।
৯ ডিসেম্বরের পর থেকেই শুরু হবে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ।
বাংলা-সহ যেসব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে SIR প্রক্রিয়া চলছে, সব জায়গাতেই বাধ্যতামূলক হবে এই অ্যাপ ব্যবহার।
কমিশন সূত্রের দাবি, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে নকল ছবির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রবণতা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।
উপসংহার
একদিকে রূপান্তরকামীদের পরিচয় স্বীকৃতি ও ভোটাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করা, অন্যদিকে ভুয়ো ভোটারদের লাগাম টানতে প্রযুক্তির জোর—দুই দিকেই কড়া অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রযুক্তিগত স্বচ্ছতার এই যুগ্ম প্রয়াস ভোটার তালিকা সংশোধনে নতুন দিশা দেখাবে বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।
আরও পড়ুন
SIR নিয়ে বড় নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের
