বাংলার ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখার বিশেষ প্রক্রিয়া SIR (Special Summary Revision / Special Interim Revision) নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অসন্তোষ তুঙ্গে। দলের অভিযোগ, “এসআইআর-এর অজুহাতে” বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করেছিলেন— একজনও প্রকৃত ভোটার বাদ গেলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে তৃণমূল। এরপরই শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠকে সরব হন তৃণমূল নেতৃত্ব।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, প্রতিমা মণ্ডল, প্রকাশ চিক বরাইক, সাজদা আহমেদ, মমতাবালা ঠাকুর, সাকেত গোখলে-সহ বড়সড় প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দলের অভিযোগ, কমিশন তাঁদের কোনও প্রশ্নেরই যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে পারেনি।
তৃণমূলের পাঁচ দফা প্রশ্নবাণ
বৈঠক শেষে বাইরে এসে তৃণমূলের লোকসভার উপদলনেতা শতাব্দী রায় একে একে পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরেন—
১. এসআইআর কি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতেই?
যদি তাই হয়, তাহলে কেন বিশেষভাবে বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে?
দেশজুড়ে কেন বাঙালিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা আক্রমণ চলছে?
২. মিজোরাম–ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যে এসআইআর হচ্ছে না কেন?
রাজ্যভেদে আলাদা নীতি কেন? এই প্রশ্নে কমিশনের ব্যাখ্যা নিয়েই ক্ষুব্ধ তৃণমূল।
৩. অবৈধ ভোটার খুঁজতেই যদি এসআইআর হয়, তবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বৈধতা কোথায়?
শতাব্দীর বক্তব্য—
“যদি ২০১৯ সালে অনুপ্রবেশকারীরা ভোট দিয়ে থাকে, তাহলে সেই সরকারেরই তো প্রশ্ন উঠছে। সে দায় কে নেবে?”
৪. ‘এসআইআর-এর জেরে ৪০ জনের মৃত্যু’— সেই দায় কি নেবে কমিশন?
তৃণমূল দাবি করেছে, এই প্রক্রিয়া ঘিরে আতঙ্কে বা চাপের কারণে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বা সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা কি করেছে কমিশন?
৫. তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে কি তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
শতাব্দীর বক্তব্য—
“এতদিন আমরা যেসব বেনিয়মের অভিযোগ এনেছি, তার কোনও জবাব নেই কমিশনের কাছে।”
ডেরেক ও’ ব্রায়েনের কড়া বক্তব্য
ডেরেক জানান,
“এসআইআর নিয়ে আমরা কমিশনকে স্পষ্টভাবে পাঁচটি প্রশ্ন করেছি। একটি প্রশ্নেরও সদুত্তর তারা দিতে পারেনি। তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করা চলবে না।”
তৃণমূল প্রতিনিধি দল দাবি করে—
এখনই এই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হোক।
তৃণমূলের হুঁশিয়ারি: আন্দোলন আরও জোরদার হবে
সূত্রের খবর, যদি কমিশন দ্রুত কোনও সমাধান বা সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা না করে, তবে তৃণমূল রাষ্ট্রীয় স্তরে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে পারে। মমতা ও অভিষেক ইতিমধ্যেই দিল্লিতে আন্দোলন নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিয়ের মরশুমে যখন সাধারণ মানুষের ব্যস্ততা তুঙ্গে, তখন ভোটার তালিকা নিয়ে এই উত্তাপ রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামনে আরও কী সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন—সেদিকেই এখন সকলের চোখ।
আরও পড়ুন
এক মাসে বাংলায় এসআইআরে ৩৩ মৃত্যু: আতঙ্ক, চাপ ও দায় ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক তরঙ্গ
