প্রতারণার ফাঁদ ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ কি জিনিস এবং মুক্তি উপায়ই বা কী?

বর্তমানে একটি নতুন পদ্ধতিতে সাইবার প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে, আর তা হলো ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি।’ গ্রেফতার শব্দটি জুড়ে থাকলেও তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। কারণ গ্রেফতারি না বলে এটিকে প্রতারণা বলা চলে। আর এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে খোয়াতে হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী৷ রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে সাবধান করেছেন দেশবাসীকে।

তিনি জানিয়েছেন, ডিজিটাল গ্রেফতারি বলে কিছু হয় না। দেশের কোনও আইনে এমন কোনও পদ্ধতির উল্লেখ নেই। এদিন রবিবার প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ডিজিটাল গ্রেফতারির জালিয়াতি থেকে সাবধান। আইনে ডিজিটাল গ্রেফতারের মতো কোনও বিষয় নেই। এই ধরনের তদন্তের জন্য কোনও সরকারি সংস্থা ফোন বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।” ডিজিটাল গ্রেফতারির যে রমরমা বেড়ে চলেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র।

কী এই ডিজিটাল গ্রেফতারি!

তবে জেনে নেওয়া যাক, কী এই ডিজিটাল গ্রেফতারি! প্রতারকেরা প্রথমে অডিও বা ভিডিও কলে কোনও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিশানা করেন। এরপর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আদায়ের জন্য একাধিক ফন্দি করেন। এই অর্থ আদায়ের জন্য প্রতারকেরা ব্যক্তিকে বন্দি করে রাখে। যেসব প্রচারকেরা ডিজিটাল গ্রেফতারির ফন্দি আঁটেন তারা কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, আরবিআই, নারকোটিক্স শাখা সহ বিভিন্ন সংস্থার হয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফোন করেন।

যে ব্যক্তিকে তারা ফাঁদে ফেলেন তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। কখনও সেই ব্যক্তির আত্মীর পরিজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তারা। বলা হয়, সেই অভিযোগের সপক্ষে তাদের প্রমাণ রয়েছে। এই ফাঁদে পা দিলে ওই ব্যক্তিকে ডিজিটাল গ্রেফতার করা হয়। প্রতারকেরা ফোন করে দাবি করেন, ওই ব্যক্তি নিজে বা কারোর মাধ্যমে অবৈধ পণ্য পাচার করেছেন। ওই ব্যক্তি অস্বীকার করলে পাল্টা বলা হয় তাদের সেই ফোন নম্বর সেই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

এরপর যে ব্যক্তিকে নিশানা করা হয়েছে তাকে ভিডিও কলে মুখ দেখাতে বলা হয়। এদিকে প্রতারকের তরফে যাকে দেখা যায় তিনি কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মীর পোশাকে থাকেন। তিনি যে ঘরে বসে থাকেন সেটিকেও অফিসের আদলে সাজানো হয়। যদি ভিডিও কলে ব্যক্তি ভয় পান তবে তাকে আরও ভয় দেখানো হয়৷ ডিজিটাল গ্রেফতারিতে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্কাইপ বা অন্যান্য ভিডিয়ো কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ‘ভিজ্যুয়াল’ নজরদারির মধ্যে প্রতারিতদের উপর নজর রাখা হয়।

যদি কোনও আত্মীয়র নাম নিয়ে ফোন করা হয় তবে আত্মীয়কে সেই ব্যক্তি যাতে ফোন না করেন সেই ভয় দেখানো হয়৷ এরপর এই মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে মোটা টাকা চাওয়া হয়। আর তা দিতে না পারলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে এমন হুমকি দেওয়া হয়৷ এই ফাঁদে যারা পড়েন তাদের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়৷ ইতিমধ্যে এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রচুর মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।

তাই এই বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ডিজিটাল গ্রেফতারি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো সচেতনতা। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার নাম দিয়ে কেউ ফোন করলে এবং ভয় দেখালে কোনও মতে ভয় পাওয়া চলবে না। এই ফাঁদে পা দিতে বারবার বারণ করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও সরকারি সংস্থা যোগাযোগের জন্য অডিও বা ভিডিও কল করবেন না। তাই যদি কারোর পরিবারের কাউকে নিয়ে ভয় দেখানো হয় বা বলা হয় তিনি ডিজিটাল গ্রেফতারির শিকার হয়েছেন তবে তৎক্ষনাৎ সেই আত্মীয়কে ফোন করতে হবে। দরকার হলে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এর পাশাপাশি গোটা ঘটনার স্ক্রিনশট ও ভিডিও রেকর্ডিং রাখতে হবে।