শীতকাল এলেই বহু মানুষের কাছে হাঁটুর ব্যথা যেন নতুন করে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা আবহাওয়ার ফলে শরীরের রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং হাড়-জোড়ায় শক্তভাব জন্ম নেয়। পেশী শক্ত হয়ে যাওয়ায় হাঁটাচলা কঠিন হয়ে পড়ে, এমনকি অনেকের পা ফুলেও যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার এই প্রভাব থেকে সৃষ্টি হওয়া ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে, যেগুলি নিয়মিত মানলে পেইনকিলারের উপর নির্ভরশীলতা কমে।
উষ্ণ তেলের ম্যাসাজ: তাৎক্ষণিক আরামের সেরা উপায়
সরষে, তিল বা নারকেল তেল হালকা গরম করে হাঁটুতে ম্যাসাজ করলে রক্তপ্রবাহ বাড়ে ও শক্তভাব কমে। উষ্ণ তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে পেশীকে শিথিল করে এবং ফোলাভাব কমায়। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন রাতে ১০ মিনিট ম্যাসাজের পরামর্শ দেন, যা নিয়মিত করলে হাঁটুর শক্তভাব ও ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হলুদের কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে
হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী উপাদান। শীতকালে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চতুর্থাংশ চা চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমে যায় এবং হাঁটুর যন্ত্রণাও হ্রাস পায়। একই সঙ্গে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
গরম সেঁক: স্নায়ুতে আরাম এনে ব্যথা কমায়
হাঁটুর ব্যথা বা শক্ত হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গরম জলের কম্প্রেস খুব দ্রুত আরাম দেয়। উষ্ণতা স্নায়ুকে প্রশান্ত করে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়ায়। প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট গরম সেঁক দিলে ব্যথা অনেকটাই নেমে আসে। তবে জল বেশি গরম হলে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
মেথি: জয়েন্টের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ
মেথির প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য হাঁটুর ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এক চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে চিবিয়ে খাওয়া বা মেথির পেস্ট হাঁটুতে লাগানো—উভয়ই প্রদাহ কমাতে উপকারী।
আদা: উষ্ণতা বাড়িয়ে ব্যথা উপশম
আদায় থাকা জিঞ্জেরল যৌগ প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। হাঁটুর ব্যথা বাড়লে আদা চা পান করা, গরম জলে আদা দিয়ে বাষ্প নেওয়া, অথবা আদার পেস্ট হাঁটুতে লাগালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। ঠান্ডার কারণে সৃষ্ট ব্যথায় আদা বিশেষ উপকারী।
হালকা ব্যায়াম: হাঁটুকে সচল রাখার মূল চাবিকাঠি
শীতকালে অনেকে নড়াচড়া কম করেন, ফলে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫–২০ মিনিট হালকা হাঁটা, স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করলে হাঁটু নমনীয় থাকে, রক্ত প্রবাহ ভালো হয় এবং ব্যথা কমে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি?
হাঁটুর ব্যথা যদি কয়েক দিন ধরে স্থায়ী হয়, হাঁটাচলা কঠিন হয়ে পড়ে, জোড়ায় অস্বাভাবিক উষ্ণতা বা অতিরিক্ত ফোলাভাব দেখা দেয়—এগুলি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকার ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
আরও পড়ুন,
স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিকল্প: ট্যাম্পন ও মেনস্ট্রুয়াল কাপ নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
